‘চটকা গাছের আগডালে একটা বড় লতার ঘন সবুজ আড়ালে, টুকটুকে রাঙা, বড় বড় সুগোল কি ফল দুলিতেছে! অপু ও দুর্গা দুজনেই দেখিয়া অবাক হইয়া গেল। অনেক চেষ্টায় গোটা কয়েক ফল–সুদ্ধ নীচের দিকে লতার খানিকটা অংশ ছিঁড়িয়া তলায় পড়িতেই মহা আনন্দে দুজনে একসঙ্গে ছুটিয়া গিয়া সেগুলিকে মাটি হইতে তুলিয়া লইল। পাকা ফল মোটে তিনটি।’ অবিকল পথের পাঁচালীর এ দৃশ্য রচনা করেছে বরেন্দ্রভূমির দুই শিশু অসীত আর সূচনা। জায়গাটি হলো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রাম।

কয়েক দিন আগে তাদের দেখা পাওয়া যায় গোদাগাড়ীর ছয়ঘাটি ও চৈতন্যপুর গ্রামের মাঝে মাঠের মধ্যে, একটা মজা পুকুরের পাড়ে ছোট জঙ্গলের ধারে। তাদের হাতেও কাঁচাপাকা গুটিকয়েক ফল। কী ফল জানতে চাইলে তারা দুজনই গাছের ডাল ছেড়ে দিয়ে পেছন ফিরে বলল, ‘বেহেনচি’।

মনে পড়ে গেল গোদাগাড়ীর চৈতন্যপুরের একজন কৃষক মনিরুজ্জামানের ফেসবুকের একটি পোস্টের কথা। সেখানে তিনি বেহেনচি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই পোস্টে দিয়েছিলেন ফল খাওয়ার ছবি। সেদিনই মোকারম হোসেনের বাংলাদেশের পুষ্প-বৃক্ষ-লতা-গুল্ম বই ঘেঁটে ছবি মিলিয়ে দেখেছিলাম বেহেনচি ফল আসলে আমাদের চিরচেনা বঁইচি। এবার অসীত ও সূচনাকে ওই গাছের নিচে দেখেই মনে হলো সেই বেহেনচিতলায় এসে গেছি।

বঁইচি বাংলাদেশের একধরনের বিলুপ্তপ্রায় ও অপ্রচলিত ফল। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এ ফল কাঁটাবহরী, বুঁজ, ডুংখইর, পাইন্নাগুলা, বিউচি বাইছা, তামাবট নামেও পরিচিত; কিন্তু বইপুস্তকে কোথাও বেহেনচি নাম পাওয়া যায় না। ধারণা করা যায়, গোদাগাড়ী অঞ্চলের মানুষের কথ্য ভাষায় ‘হ’ বর্ণের প্রভাব রয়েছে। যেমন হামি, আমহারকে, কহছি, চাহছি ইত্যাদি। শুনলে অন্য এলাকার মানুষের কাছে মনে হয়, হ বর্ণটি অযাচিতভাবে শব্দের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এভাবে বঁইচির আঞ্চলিক উচ্চারণ বরেন্দ্র অঞ্চলে হয়তো বেহেনচি হয়ে গেছে।

বঁইচি ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ের পাদদেশে জন্মে। ইংরেজি নাম governor’s plum, batoko plum, and Indian plum।

মোকারম হোসেনের বইয়ে বলা হয়েছে, ‘অসংখ্য শাখা ও কাঁটাযুক্ত গুল্ম-শ্রেণির পত্রঝরা গাছ। দেড় থেকে তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বাকল ধূসর ও খসখসে। পাতা ২-৭ সেন্টিমিটার লম্বা, গুচ্ছাকার, অপরিণত রং লালচে বা গোলাপি, আকার-আকৃতিতে অসম। ফল গোলাকার, পাকলে রক্তবেগুনি, আড়াই সেন্টিমিটার চওড়া, বীজ ৫-৮টির মতো। ফুল ও ফলের মৌসুম মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত। ফল খাওয়া যায়। বীজ, কাটিং এবং গুটিকলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা যায়। এশিয়া, উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকা অঞ্চলে পাওয়া যায়। ফলটি বিপন্ন নয়।’

হাতভরা কাঁচা-পাকা বঁইচি ফল তুলেছে চৈতন্যপুরের শিশুরা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৭ থেকে ৩১ জুলাই) পর্যন্ত সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আলোচ্য এ সময়ে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ।

শনিবার (২ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১০.৩১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৫১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.২০ পয়েন্ট বা ১.৯৪ শতাংশ।

এর আগের সপ্তাহের (২৪ থেকে ২৮ জুলাই) শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৭১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৩১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.৬০ পয়েন্ট বা ৬.১৮ শতাংশ।

খাতভিত্তিক পিই রেশিওগুলোর মধ্যে- জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৬.১০ পয়েন্টে, ব্যাংক খাতে ৭.১৯ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতে ৯.৮৯ পয়েন্ট, টেক্সটাইল খাতে ১০.৭০ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১১.০৮ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতে ১১.৩৫ পয়েন্টে, আর্থিক খাতে ১২.৬০ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৭৭ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতে ১৪.১০ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৪.৯৪ পয়েন্টে, আইটি খাতে ১৬.৩১ পয়েন্টে, বিবিধ খাতে ১৬.৬৫ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১৭.৯৬ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১৮.৪৩ পয়েন্টে, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ২১.৮১ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে ২১.৯৩ পয়েন্টে, পাট খাতে ২৬.১৯ পয়েন্টে, ট্যানারি খাতে ২৬.৭৭ পয়েন্টে,   এবং সিরামিক খাতে ৫৭.৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ