জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রতিটি হত্যার বিচার দাবিতে ১৯ জুলাই ‘ন্যাশনাল কনভেনশন’
Published: 1st, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হওয়া প্রতিটি হত্যার বিচার দাবিতে ১৯ জুলাই ‘ন্যাশনাল কনভেনশন’ করবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
রাজধানীর পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এই কনভেনশন হবে। ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ ও ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ’ যৌথভাবে কনভেনশন আয়োজন করবে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ঢাকা ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ ও ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ’ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে কনভেনশন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আওয়াল। তিনি জানান, ১৯ জুলাই বেলা ১১টায় কনভেনশন শুরু হবে।
রবিউল আওয়াল বলেন, জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যার বিচার চান তাঁরা। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁরা এ কনভেনশনের আয়োজন করছেন। সারা দেশের শহীদ পরিবার আর আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কনভেনশনে অংশ নেবেন। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারেরা কনভেনশনে থাকবেন। প্রায় চার হাজার মানুষ কনভেনশনে সমবেত হবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।
শহীদ পরিবারের যেসব সদস্য ঢাকার বাইরে থেকে আসবেন, তাঁদের জন্য পরিবহনসহ থাকার ব্যবস্থা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের থেকে সাধ্যমতো অনুদান নিয়ে এই কনভেনশন আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অনুদান নেওয়া হবে।
জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান ও শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘ন্যাশনাল কনভেনশনে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা তাঁদের দুঃখের কথা তুলে ধরবেন। এটাই এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য।’
অন্তর্বর্তী সরকার যেন সন্তান হত্যার বিচার করে যায়, সেই দাবি করেন জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির উপদেষ্টা ও শহীদ জাবিদ ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চাওয়া স্পষ্ট। আমরা আগে বিচার চাই। নির্বাচন কবে হবে, কোন দল ক্ষমতায় এল—এসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। সম্মেলনে এ কথাগুলো তুলে ধরব।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শহীদ হওয়া ইমন মিয়ার মা জহুরা বেগম বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমার সন্তান হত্যার বিচার করে তারপর দায়িত্ব ছাড়ুক। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের টানাটানির মধ্যে পড়তে চাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির সহসভাপতি আবুল হাসান, শহীদ মোবারক হোসেনের মা ফরিদা বেগমসহ শহীদ ও আহত পরিবারের অর্ধশতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য র ব চ র পর ব র র র সদস সরক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা
আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রীন জিরো কূপন বন্ড ইস্যুতে জালিয়াতির কারণে সালমান এফ রহমান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এছাড়া সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সিটি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের শনাক্ত করে সিআইবিতে রিপোর্ট করার নির্দেশ
বুধবার (৩০ জুলাই) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই সেটার সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। ওই বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, যা ওই বছরের ২ মার্চ নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। ওই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয় বা উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়া ওই বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার)। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে।
এ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমানকে ১০০ কোটি ও ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে উভয়কে আজীবন অবাঞ্ছিত (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
একই সঙ্গে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এবং তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে অ্যানফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া ওই বন্ড সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা/এনটি/এসবি