ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর ‘স্পষ্ট অবস্থান ও কার্যক্রম’ দেখতে চান সারজিস
Published: 1st, June 2025 GMT
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে ‘সামান্য আগুন’ নিয়ে যাদের এত চিন্তা, তারা গত নয় মাসে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও খুনিদের ধরতে কয়টি অভিযান চালিয়েছে, এই প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনো যথেষ্ট সম্মানের জায়গায় রাখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সারজিস আলম এসব কথা বলেছেন। জি এম কাদেরের রংপুরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মহানগরের পায়রা চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ও জেলার আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাসদস্যরা। খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে যান সারজিস আলম। সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর রাত দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়েন তিনি।
এরপর আজ সন্ধ্যায় ‘রংপুর ও আওয়ামী লীগের B Team জাতীয় পার্টি ইস্যু!’ শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সারজিস আলম। তাঁর পোস্টটি নিচে তুলে ধরা হলো:
‘‘১.
২. আওয়ামী লীগ ও ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে সাময়িক বিরোধিতার ভান ধরে বিরোধী দলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে জাতীয় পার্টি। এমনকি বিএনপি-জামায়াত যখন প্রহসনের অবৈধ নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে, হাজারো অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছে, তখন এই জাতীয় পার্টি বিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে! সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে!
৩. দুই দিন আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে গিয়ে আবার স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা শুরু করেছে!
৪. অতঃপর যখন রংপুরের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য একসঙ্গে জি এম কাদের ও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অহিংস বিক্ষোভ মিছিল করে, তখন জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা সেই বিক্ষোভ মিছিলে প্রথম হামলা চালায়!
এরপর জি এম কাদেরের বাড়িতে একটি বাইক পোড়ানোর ঘটনা দেখা যায়। এই বাইক পোড়ানোর মব বা ভ্যান্ডালিজমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রংপুরে দায়িত্বরত সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদের খুঁজতে নয় মাসের সর্বোচ্চ বড় অপারেশনের জন্য মাঠে নামে! মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধীর আহ্বায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হতেই পারে, এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনাগুলোর কারণ কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না খুঁজে সর্বশেষ বিষয় নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানো শুরু হয়।
আরও পড়ুনরংপুরে জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা, অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে২৯ মে ২০২৫জি এম কাদেরের বাড়ির পুরোনো বাইক আর সামান্য আগুন নিয়ে যাদের এত চিন্তা, তারা বিগত নয় মাসে আওয়ামী সন্ত্রাসী খুনিদের ধরতে কয়টা অভিযান চালিয়েছে? কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে? যে মোস্তফা একাধিক অবৈধ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তার পরিবারের সদস্য ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে রংপুরে লুটপাট চালিয়েছে, কোটি টাকা দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে, সিটি করপোরেশনকে ডাকাতির ক্ষেত্র বানিয়েছে, সেই মেয়র মোস্তফাকে ধরতে কয়দিন অপারেশন চালানো হয়েছে? নয় মাসে রংপুরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী দখলদারদের থেকে জনগণের ন্যায্য সম্পদ-অর্থ উদ্ধারের জন্য কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে?
আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী দুই নেতার কাছে তথ্য চাইল সেনাবাহিনী, খবর শুনে গেলেন সারজিস৯ ঘণ্টা আগেজাতীয় পার্টির যে সন্ত্রাসীরা অবৈধ মেয়র মোস্তফার নেতৃত্বে প্রথম ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে, যে জি এম কাদের এলাকায় সন্ত্রাসীদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছে, তাদের ধরতে কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনো যথেষ্ট সম্মানের জায়গায় রাখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তাদেরই বি টিম জাতীয় পার্টিরূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলে সেই চেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করা হবে।”
আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলাও নেয়নি পুলিশ১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম ক দ র র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতার বদলে বিশেষ প্রণোদনা পেতে পারেন
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আজ সোমবার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘২০১৫ সালের পর কোনো বেতনকাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।’
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি অ্যাকটিভলি কনসিডার করছি। একটা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। মহার্ঘ ভাতা হওয়ার চান্স মোটামুটি। হয়তো একটু সময় লাগবে।’
তবে বাজেট বক্তৃতায় ‘মহার্ঘ ভাতা’ নিয়ে কিছু উচ্চারণ করেননি অর্থ উপদেষ্টা। শুধু বাজেট বক্তব্যেই নয়, তিনি কখনোই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে যে বেতনকাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তা ২০১৫ সালের ১ জুলাই কার্যকর করা হয়েছিল। তাঁরা মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এর পর থেকে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অর্থাৎ ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন।
তবে মূল্যস্ফীতি আমলে নিয়ে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাচ্ছেন। সে প্রণোদনাই এবার আরেকটু বাড়ানো হতে পারে। ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি আরও ১০ শতাংশ অর্থাৎ মোট ১৫ শতাংশ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আর প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ভাবা হচ্ছে বিদ্যমান ৫ শতাংশের পাশাপাশি আরও ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০ শতাংশ প্রণোদনা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে। চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি কাজ শুরু করে। এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা শুরু হলে সরকার পরে পিছিয়ে যায়। নতুন করে আলোচনাটি আবার শুরু হয় গত মাসে। এ বিষয়ক কমিটি প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এবং ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা সুপারিশ করে।
বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৩০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাঁদের ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বেতন-ভাতায় মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাড়ছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করার পর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হয়। অর্থ বিভাগ থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে যে শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা নামে কিছু না–ও দেওয়া হতে পারে। যে বিশেষ প্রণোদনা বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগ হতে পারে। তবে মহার্ঘ ভাতা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী ঈদের পর এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
মহার্ঘ ভাতার আলোচনা শুরু হলে একদিকে রাজনৈতিক দল বিএনপি, অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বিরোধিতা করে। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এই সময়ে মহার্ঘ ভাতা দিলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’
এক সপ্তাহ আগে গত ২৭ মে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা (মহার্ঘ ভাতা) কি সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে করা হচ্ছে?’