জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিক উপলক্ষে সদর থানা বিএনপির দোয়া
Published: 1st, June 2025 GMT
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিক উপলক্ষে সদর থানা বিএনপির দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১ জুন) দুপুরে দুই নাম্বার গেইট এ নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির আয়োজনে শহীদ রাস্টপতি জিয়াউর রহমানে ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হায়নাদের বাহিনীর কাছে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে ধরা দিয়ে নিজেকে সেভ করে রেখেছেন কিন্তু জিয়াউর রহমান নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন।
তাই এখনো পর্যন্ত জিয়াউর রহমান মানুষের অন্তরে এদের অবস্থান ধরে রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ন্যায় নিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন।
জিয়াউর রহমান যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন বাংলার মানুষের কল্যাণে তিনি নিজের সমস্ত সময় উৎসর্গ করেছেন। দেশের প্রতি যে ভালোবাসা সেই ভালোবাসা আমাদের অন্তরে ধারণ করে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা দেশের মানুষের পক্ষে আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো।
বিএনপির নাম ব্যবহার করে কোন উশৃংখল পানা কাজ করলে দলের কমান্ড না মানলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। জনগণের বিরুদ্ধে যারা যাবে তাদের স্থান বিএনপিতে হবে না। কোন চাঁদাবাজার কারণে বিএনপির বদনাম হোক সেটা আমরা চাই না।
সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মনির হোসেন খান, ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির সদস্য মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক সহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ জ য় উর রহম ন ব এনপ র স সদর থ ন র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঈদের ছুটি নয়, শ্রমিকদের বেতন-বোনাসও লাগবে
৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে কর্মদিবস আছে আর মাত্র দুই দিন, মঙ্গল ও বুধবার। এখনো অর্ধেকের বেশি কারখানায় শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস পাননি। প্রতিবছর দুই ঈদের আগে শিল্প-অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব এলাকার কারখানাগুলোকে নিবিড় পর্যালোচনায় রেখেছে শিল্প পুলিশ। এই পর্যবেক্ষণ শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে, শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন ও বোনাস পাওয়া নিশ্চিত করতে নয়।
১ জুন শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোট ৯ হাজারে ৬৮৩ কারখানার মধ্যে গত মে মাসের বেতন পরিশোধ করেছে মাত্রা ৮৪৯টি। বকেয়া আছে ৮ হাজার ৮৩৪টির। বেতন পরিশোধের হার ৮ দশমিক ৭৭। অপরিশোধের হার ৯১ দশমিক ২৩। অন্যদিকে বোনাস পরিশোধ করেছে ৯ হাজার ৬৮৩টি কারখানার মধ্যে ৪ হাজার ২৪২টি। পরিশোধের হার ৪৩ দশমিক ৮২। অপরিশোধের হার ৫৬ দশমিক ১৯।
বণিক বার্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের আট শিল্প এলাকায় ৩১ মে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৬৭ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়নি। দেশে শিল্প-অধ্যুষিত আট এলাকা—আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটে মোট কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮৩।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক গাজী জসীম উদ্দিনের দাবি, তাঁরা বড় দুটি সমস্যা নিষ্পত্তি করতে পেরেছেন। টিএনজেড গ্রুপ ও মাহমুদ ফ্যাশনের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছেন। ভালো খবর। কিন্তু কেবল এই দুই শিল্প গ্রুপেই তো সমস্যা নেই। আরও অনেক শিল্প গ্রুপে সমস্যা আছে। কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। গত ১০ মাসে নতুন কারখানায় যত শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, তার চেয়ে বেশি শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, কালিয়াকৈর থানাধীন সূত্রাপুর এলাকায় জিএমএস টেক্সটাইল লিমিটেড ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের সঙ্গে শিল্প পুলিশ আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন। ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করতে থাকলে শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সমস্যা কেবল কালিয়াকৈরে নয়, আরও অনেক স্থানে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন বেতন-বোনাসের দাবিতে।
অনেক মালিক ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাস দিলেও মাসের পুরো বেতন দেন না, অর্ধেক দেন। তাঁরা মনে করেন, পুরো বেতন দিলে শ্রমিকেরা আর দ্রুত কাজে ফিরে আসবেন না। তখন কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। দু-একজন শ্রমিক এই কাজ করতে পারেন, কিন্তু তাই বলে গণহারে তাঁদের বেতন আটকে রাখার যুক্তি নেই। এটা তো অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে না। পুরো মাস কাজ করার পর তাঁর যে প্রাপ্য, সেটা থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে?২৮ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) ও আরএমজি-বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-বিষয়ক টিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) আওতাধীন কারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের ঈদে ছুটির বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস ৩১ মের মধ্যে এবং মে মাসের বেতন ৩ জুনের মধ্যে পরিশোধ করার কথা বলা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কারখানা, প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে, সেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়।
১৯ মে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ৩ জুনের মধ্যে পোশাক কারখানার কর্মীদের মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে হবে। তবে শ্রমিকেরা অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জানা উচিত যে শ্রমিকেরা সাধারণত অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে মাঠে নামেন না। তাঁরা মাঠে নামেন বকেয়া পাওনার দাবিতে। মালিকেরা যখন বেআইনিভাবে তাঁদের চাকরি খেয়ে দেন, তখন।
এর আগে ২১ মে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সভায় শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে শ্রমিকের পাওনা ২৮ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সেটি না করলে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। যেসব মালিকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তাঁরা বিদেশে থাকলে রেড অ্যালার্ট জারি করতে বলেছি। হয় পাওনা শোধ করতে হবে, না হলে জেলে যেতে হবে। বেতন পরিশোধ না করলে দেশের বাইরে তো দূরের কথা, ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না মালিকেরা।’
শ্রম উপদেষ্টার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এক ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, ‘সরকার থেকে ধমক দেওয়া হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে বেতন-ভাতা না দিলে মালিকদের জেলে দেবে। অথচ তাঁরা গ্যাস দেবেন না, ব্যাংকের সুদহার বাড়াবেন। আবার আমাকে গ্যাসের বিল দিতে হবে, ব্যাংকের ঋণ দিতে হবে। কোথা থেকে দেব।...সরকার যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে না পারে, তাহলে শিল্পমালিকেরা দায়ভার কেন নেবেন।’
শ্রম উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পরও অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দেননি। তাঁরা হয়তো নিজেদের উপদেষ্টা বা সরকারের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান মনে করেন।
অনেক মালিক ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাস দিলেও মাসের পুরো বেতন দেন না, অর্ধেক দেন। তাঁরা মনে করেন, পুরো বেতন দিলে শ্রমিকেরা আর দ্রুত কাজে ফিরে আসবেন না। তখন কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। দু-একজন শ্রমিক এই কাজ করতে পারেন, কিন্তু তাই বলে গণহারে তাঁদের বেতন আটকে রাখার যুক্তি নেই। এটা তো অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে না। পুরো মাস কাজ করার পর তাঁর যে প্রাপ্য, সেটা থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে?
শিল্প বিকাশের পেছনে যেমন মালিকের পুঁজি থাকে, তেমনি থাকে শ্রমিকের শ্রম। শ্রমিককে বাদ দিয়ে শিল্পকারখানা চলবে না। যেসব কারখানার মালিক মাসের পর মাস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কেবল শিল্পখাত নয়, আরও অনেক খাতের কর্মীরা ঈদের আগে বেতন বোনাস থেকে বঞ্চিত থাকেন।
সরকার এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে। আশা করা যায়, এতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারবে। কিন্তু শ্রমিকেরা যদি ঈদের আগে তাঁদের বেতন ও বোনাস-ই না পান, তাঁরা বাড়ি যাবেন কী করে?
এ বিষয়ে এক শ্রমিক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এখনো দুদিন সময় আছে। আমরা আশা করি, ছুটির আগে যাতে সব শ্রমিক যাতে মে মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পান, সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তারা মালিকদের বাধ্য করবে। কেননা, শ্রমিকদের কেবল ছুটি হলেই চলবে না, ‘তাঁদের বেতন-বোনাসও লাগব’।
সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি
(মতামত লেখকের নিজস্ব)