ফরিদপুরের নগরকান্দায় ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেত্রীর ওপর হামলা ও মারধর নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। উত্ত্যক্তের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কও অবরোধ করা হয়।

গত শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে উত্ত্যক্ত ও মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলাম বাদী হয়ে দুটি ও পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।

ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী নেত্রী বৈশাখী ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, বিএনপির লোকজন ওই হামলা করেন। তাঁরা আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তবে ভবুকদিয়া এলাকায় ঘুরে এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্ত্যক্তের ঘটনা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না করে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় ওই নেত্রীর ওপর হামলা করা হয়। পরে সালিস থেকে অভিযুক্ত ছয়জনকে পুলিশ আটক করলে এলাকাবাসীর ক্ষোভ থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভবুকদিয়া বাসস্ট্যান্ডের আশপাশ এলাকা ঘুরে শুক্রবারের ঘটনা জানতে চাওয়া হয়। তবে স্থানীয় দোকানদার ও এলাকার লোকজন বেশির ভাগই বিষয়টি এড়িয়ে যাওযার চেষ্টা করেন। কেউ বলেন, ‘আমি দোকানে ব্যস্ত ছিলাম, দেখিনি কি ঘটেছে।’ কেউ বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না।’ পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঘটনা খুলে বলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃষ্টির পর বৈশাখী দশম শ্রেণিতে পড়া তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে বৃষ্টির পানি দেখতে বের হন। তখন রাস্তায় শরীফ শেখ (২১), সাগর কাজী (২৬), ফয়সাল শেখসহ (২৫) কয়েকজন ছিলেন। শরীফ শেখ দুই বোনের উদ্দেশে অশ্লীল কথা বললে বৈশাখী প্রতিবাদ করেন। পরে বৈশাখী এলাকার মুরব্বিদের কাছে বিচার দেন। শুক্রবার বিকেলে সালিসের জন্য এলাকার মাতব্বর ও নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুক্রবার দুপুরে বৈশাখী নগরকান্দা সদরে গিয়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিলে বৈশাখী থানায় গিয়ে শরীফ শেখের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক তাঁর ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করেছেন বলে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের বিষয়টি ভবুকদিয়া এলাকায় জানাজানির পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, নগরকান্দা থেকে ভবুকদিয়া ফিরে আসার পর বেলা তিনটার দিকে ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য সেকেন কাজীম, তাঁর ছেলে সাগর কাজী, ফয়সালসহ কয়েকজন মামলা করার জন্য বৈশাখীকে মারধর করেন। সালিসের জন্য বদিউজ্জামান মোল্লা বিকেল পাঁচটায় সময় দিলেও পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সালিসের জন্য বিবাদীপক্ষ আগে থেকে ভবুকদিয়া বাজারে উপস্থিত ছিল। এদিকে বৈশাখীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নগরকান্দা থানা থেকে এক গাড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন বৈশাখী জানান, তিনি স্থানীয় সালিস মানেন না, সমাধান পুলিশের মাধ্যমে হবে। তখন পুলিশ শরীফ শেখ (২১), আরিফ হোসেন (২৩), সজীব শেখ (২৪), রাসেল শেখসহ (১৯) ১৫ ও ১৬ বছর বয়সী আরও দুই কিশোরকে গাড়িতে তোলে।

স্থানীয় সালিস না মানায় এবং সালিসের জন্য উপস্থিত এলাকাবাসীর মধ্য থেকে ছয়জনকে আটক করায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিতে পুলিশের কাছে দাবি জানান। পুলিশ আটক ব্যক্তিদের না ছাড়লে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা পুলিশের ওপর হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে নিজেরাও হামলার শিকার হন। পরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা হাজির হন। রাত ৯টার দিকে বৈশাখীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে বিচারের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবুকদিয়া এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটিকে পারিবারিক ঘটনা বলা চলে। এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে পরে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বেশি আলোচিত হওয়ার জন্য।’

আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর: নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৬৩১ মে ২০২৫

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা সুবিধা পার্টি। বিশেষত, সাগর কাজী আগে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা জামালের রাজনীতি করতেন। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তিনি বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান মোল্লার ছবি দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। শামা ওবায়েদের সাথেও তাঁর ছবি আছে। তিনি বিএনপির নেতা-কর্মী নন। যখন যে দলে সুযোগ পান, সেই দলে ভিড়ে যান।’

বৈশাখীর পরিবারটি খুবই দরিদ্র। কাঁচা ভিতের বারান্দাযুক্ত চৌচালা একটি টিনের ঘরে পরিবারের ছয় সদস্য বসবাস করেন। বৈশাখীর বাবা একজন কৃষক। বৈশাখীর মা ফাহিমা বেগম বলেন, ‘আমি রাজনীতি-টাজনীতি বুঝি না। ওরা চোরকে বলে চুরি করতে, গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকতে। আমার মেয়েকে মারধর করা হয়েছে। আমি তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

আরও পড়ুনফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর, দোষীদের আটক করতে এসে পুলিশ হামলার শিকার৩১ মে ২০২৫

অভিযুক্ত শরীফ শেখের বাড়িটি সেমি পাকা। শরীফ শেখের ভাবি সোমা আক্তার দাবি করেন, বৈশাখীকে মারধর করার অভিযোগ ঠিক না। শরীফ উচ্চমাধ্যমিকে পাস করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে। উত্ত্যক্তের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শরীফ বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল। এক বন্ধু পেছনে পড়ে যায়। তাঁকে দৌড়ে আসতে বলে শরীফ। তখন রাস্তায় বৈশাখী ও তাঁর ছোট বোনও ছিল। তারা ভেবেছে, তাঁদের বাজে কথা বলেছে শরীফ।’  

বৈশাখীর নিজের ভাষ্য, ঘটনা ঘটিয়েছে সুবিধাবাদী দল। তারা আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘুরত। এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা বিএনপি করে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাদের ছবি আছে।

আরও পড়ুনফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর থানার ওসিকে প্রত্যাহার৩১ মে ২০২৫

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত শরিফ বলেন, ‘এটি ভাবুকদিয়া গ্রামের দুই পরিবারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’

ওই দিনের সালিসের মাতব্বর ও নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘ইভ টিজিং নিন্দনীয়। তবে এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয়। বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর সাথে যে ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল স র জন য নগরক ন দ শ ক রব র এল ক ব স ব এনপ র এল ক য় র পর ব এল ক র র জন ত ন র পর পর ব র জন য ব আওয় ম সদস য উপজ ল ম রধর ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

জাতির স্বার্থে খোলামেলা আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারসহ সব পক্ষ আন্তরিক হলে আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান।

জাতীয় নির্বাচ‌নে দ‌লের চূড়ান্ত প্রার্থী তা‌লিকা সময়মতো ঘোষণা করা হ‌বে ব‌লে বলেও জানান তিনি। এছাড়া,  জোটবদ্ধ হ‌য়ে নির্বাচ‌নে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তি‌নি।

বিএন‌পির প্রার্থী তা‌লিকা ঘোষণা করা হ‌য়ে‌ছে, জামায়া‌তের তা‌লিকা ক‌বে ঘোষণা করা হ‌বে জান‌তে চাই‌লে দলের আমির ব‌লেন, “তারাও (বিএনপি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি দেখেছি ২৩৭ টা আসনে তারা তালিকা প্রকাশ করেছেন, আবার এটিও চূড়ান্ত নয়। এরমধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে।” 

“আমরা কিন্তু এক বছর আগেই এই তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো আমরা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করব। তবে যেহেতু আমরা একা ইলেকশন করব না, আরো অনেককে আমরা ধারণ করব, দেশ এবং জাতির স্বার্থে সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে যথাসময়ে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রার্থী ঘোষণা করব।” 

আসন্ন নির্বাচন যথাসম‌য়ে অনুষ্ঠা‌নের বিষ‌য়ে আশাবাদ ব‌্যক্ত ক‌রে জামায়া‌তের আমির বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আমরা আপনারা দেশবাসী সবাই দেখতে চাই।” 

মতানৈক্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য: রাজনী‌তি‌তে মতানৈক্য কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়া‌তের আমির বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, আমাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকবে, তবে দোয়া করেন মতবিরোধ যেন না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সব দল তো এক দল নয়। সবগুলো দল ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক।” 

“আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। তবে আমরা নিজেরা যে মতটা প্রকাশ করি আমরা চেষ্টা করি চিন্তাভাবনা করে জাতির স্বার্থেই সে মতগুলা প্রকাশ করা হয়। অতএব, মতানৈক্য এটা ডেমোক্রেসির সৌন্দর্য। এটার জন্য এখানে বিরোধ লেগে গেছে অথবা দেশ একেবারে অস্থির হয়ে গেছে আমরা এইটুকু চিন্তা করতে রাজি নই” বলেন তিনি।  

খোলামেলা আলোচনার আহ্বান:

জুলাই সনদ বাস্তবায়‌নে আদেশ জা‌রি ও গণ‌ভো‌টের বিষ‌য়ে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অলরেডি দিয়ে দিয়েছি।”

সরকার রাজনৈতিক দলসমূহকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না, উনারা সময় বেঁধে দেই নাই; আমি শুনেছি ভাল করে। উনারা অনুরোধ করেছেন যে, এক সপ্তাহ সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলা বসে যদি একটা কনসেনসাসে পৌঁছাতে পারে, তাহ‌লে তারা সিদ্ধান্ত দি‌য়ে দে‌বে। সরকার ভালো কথাই ব‌লে‌ছে।” 

তি‌নি ব‌লেন, “আমরাই সবার আগে আহ্বান জানিয়েছি যে, আসুন, আমরা খোলামেলা আলোচনা করে জাতির স্বার্থে একটা সমাধানে পৌঁছি। আমরা আশা করি, অন্যরা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।” 

এর আগে গতকাল সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি:

আবারো দ‌লের আমির নির্বা‌চত হওয়া প্রস‌ঙ্গে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি। আমার সহকর্মীরা আমার ওপর একটা দায়িত্বের ভার অর্পণ করেছেন, এই দায়িত্বটা বড় ভারী। আপনারা দোয়া করবেন, দেশ এবং দ্বীনের জন্য এই দায়িত্ব পালনে আল্লাহ যেন আমাকে সাহায্য করেন। আর পাশাপাশি আমি আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, “আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাবার আগে আরেকবার আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করব। আসলে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে জাতির বিবেক আর আপনাদের হাউসগুলো দর্পণ। আমরা সমাজের এই দর্পণ এবং জাতির বিবেকের কাছে দেশ গড়ার অভিযাত্রায় জামায়াতে ইসলামী যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে যা দেশ এবং জাতির কল্যাণে আমরা এই সবগুলোতে আপনাদেরও কাছে চাই। কারণ আপনারা এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। আপনারা শুধু সাংবাদিক নন, আপনারা এই দেশের নাগরিকও বটে। অতএব, আমরা যারা নাগরিক অধিকারটা নিশ্চিত করে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই, এই ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা হবে অগ্রগণ্য, আমরা সেটা প্রত্যাশা রাখি। কারণ সাংবাদিকরা যখন জাতির কল্যাণে সিদ্ধান্ত নেন, জাতি তখন কল্যাণের পথ খুঁজে পায়।”

বি‌দেশ সফ‌রের কথা তু‌লে ধ‌রে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আপনারা হয়ত জানেন গত মাসের ১৯ তারিখ আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে দেশ থেকে বের হয়েছিলাম। তিন দিনে ওমরা সম্পন্ন করার পর ২২ তারিখ সকাল ৯টায় আমেরিকার জেএফকে এয়ারপোর্টে আমি আল্লাহর মেহেরবাণীতে সেখানে পৌঁছাই এবং সেখানে ৮ দিনব্যাপী বিভিন্ন স্তরে সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি শহরে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা করার সু‌যোগ হ‌য়ে‌ছে।”

“সেখান গুরুত্বপূর্ণ দুটি কথা দুটি মেসেজ তাদেরকে দিয়েছি। একটা হচ্ছে বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং নিষ্পেশন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পর বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মুক্তির এই সংগ্রামে দেশবাসীর সাথে প্রবাসে যারা ছিলেন, তারাও সমানতালে লড়াই করেছেন। তাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই অবদানের জন্য তাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আর আমরা বলেছি, প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটাধিকার এত দিন ছিল না। এ দাবি সবার আগে আমরা তুলেছিলাম। আমরা এ দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল জায়গায় প্রবাসীদের হয়ে কথা বলেছি। আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই; এই প্রথমবারের মত ব্যাপক ভিত্তিক আমাদের প্রবাসীদেরকে ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে।”

ভোটার হওয়ার জন্য অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এ জন্য যে সফটওয়ার ইনস্টল করা হয়েছে তা প্রোপারলি ফাংশন করে নাই, যার কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভোটার হতে পারেননি। আমাদের দাবি থাকবে নির্বাচন কমিশনের কাছে কমপক্ষে আরও ১৫ দিন এই সময় বর্ধিত করা হোক এবং যে জটিলতাগুলো রয়েছে- এগুলো সহজ করে তাদেরকে ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আরও কিছু সমস্যা আছে; কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলব একজন নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড যথেষ্ট। পাশাপাশি তার যদি একটা ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকে-তাহলে আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না। এর বাই‌রে যে সব শর্ত তা যেন শিথিল ক‌রে দেয়।” 

তুরস্ক সফর সফল হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির আমির ব‌লেন,  “তুরস্কে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের আমার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। আর বাংলাদেশি যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমার বসা হয়েছে, তাদের কথাও শোনার সুযোগ হয়েছে। আমি আসলে নিজের কোনো প্রয়োজনে দেশ থেকে বের হইনি। আমি বের হয়েছিলাম দেশ এবং জনগণের প্রয়োজনে। যেখানেই গিয়েছে জনগণের স্বার্থকে দেশের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলার চেষ্টা করেছি।” 

তিনি বলেন, “দুনিয়ার সকলের সাথেই আমরা সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্কটা হবে মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং ইকিউয়িটির ভিত্তিতে।” 

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা পালন এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান মঙ্গলবার ভো‌রে ঢাকায় ফেরেন।

এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দ‌লের সি‌নিয়র নেতারা তা‌কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

দ‌লের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সংসদ সদস্য মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম ও এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলালসহ কেন্দ্রীয় আরো অনেক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ