গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৩৭ ফিলিস্তিনির, নিহত ৫৪ হাজার ছাড়াল
Published: 2nd, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় দেড়শো। এতে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।
রোববার বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে।
রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭টি মরদেহ পৌঁছেছে, আর আহত হয়েছেন আরও ১৩৬ জন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ১৯০ জনে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বা রাস্তায় পড়ে রয়েছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি কারণ উদ্ধারকারী দলগুলো সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিল, তা ১৮ মার্চে বাতিল করে ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করে। এরপর থেকে গাজায় বিমান ও স্থলপথে হামলা আরও তীব্র হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১২ হাজার ১৪৯ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শতাধিক সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স–২০২৫’–এর প্রাথমিক খসড়া নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন, আমরা সংস্কার করছি না। আবার কেউ বলেন, আমরা অনেক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, কিছুই হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা সিপিসি (কোড অব সিভিল প্রসিডিউর), সাইবার সুরক্ষা আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছি। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিধান পরিবর্তন করেছি। জুডিশিয়াল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালাও পরিবর্তনের পথে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্ট এবং ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংশোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। গুম–সংক্রান্ত আইনের ওপর দুটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। এসব আইনের সংশোধন এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
পুলিশ বাহিনীতে জবাবদিহি বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন পরিবর্তনের কাজ করছে বলেও জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত আর পুলিশ নিজে না করে, সেটি যেন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা করে—সে লক্ষ্যে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু আইনি সংস্কার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া বড় ধরনের কোনো সাংবিধানিক সংস্কার সরকার করবে না জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন, বিশেষ করে সংবিধান পরিবর্তন, সেসব বিষয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) জুলাই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাজে সংস্কারের যে প্রত্যাশা ও চাপ রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা যথেষ্ট নয়। আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে; কিন্তু আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা চাই, শাসকেরা যেন কারও জীবন বিপন্ন না করে; মানুষ যেন মামলার জটে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন এবং নাগরিকেরা যেন তাঁদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা বর্তমান সরকার করবে না। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার আগেই ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভালো কোনো অগ্রগতি হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।