বাংলাদেশের জার্সি গায়ে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে খেলতে ঢাকায় পা রেখেছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে সামনে রেখে সোমবার (২ জুন) সকালে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

প্রথমে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তার অবতরণের কথা থাকলেও ফ্লাইট বিলম্বে তিনি পৌঁছান ১০টা ৫৫ মিনিটে। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় দলের হোটেলে যোগ দেন। চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ইংলিশ ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের।

আগামী ১০ জুন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের 'সি' গ্রুপে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে সিঙ্গাপুরের। তার আগে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ভুটানের বিপক্ষে। তবে হামজা কোন ম্যাচে খেলবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা জানিয়েছেন, ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে হামজাকে ম্যাচ ফিট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ভুটান ম্যাচে তাকে খেলানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশ, ভারত, সিঙ্গাপুর ও হংকং—চার দলেরই পয়েন্ট সমান ১। ফলে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয় পেলে গ্রুপের শীর্ষে উঠে যাওয়ার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

এই লক্ষ্য সামনে রেখে চলছে দলের ঘাম ঝরানো প্রস্তুতি। জামাল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দুই দিন অনুশীলন সম্পন্ন করেছে দল, রোববার ছিল দ্বিতীয় দিনের সেশন। সোমবার তৃতীয় দিনের প্রস্তুতি সেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে একই ভেন্যুতে।

এদিকে ইতোমধ্যে প্রবাসী ফরোয়ার্ড ফাহামিদুল ইসলাম ইতালি থেকে ঢাকায় এসে অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। বুধবার আসছেন কানাডাপ্রবাসী শমিত সোমও। ২৬ সদস্যের প্রাথমিক দলে এই তিন বিদেশফেরত ফুটবলারের দিকে রয়েছে বিশেষ নজর।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
  • দেশে প্রথমবারের মতো ২৫টি ‘বেশি বিপদজনক’ বালাইনাশক চিহ্নিত
  • হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান