যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের একটি দল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ কার্যকরভাবে ব্যবহার করছে। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন রোগীর জন্য প্রোস্টেট ক্যানসারের ওষুধ কাজ করবে, তা জানা হচ্ছে। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেকে কমে আসবে। বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলস পরীক্ষা তৈরি করেছেন।

প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে, ওষুধ তা বলে দিচ্ছে এআই। অ্যাবিরাটেরোন নামক একটি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা নতুন এআই দিয়ে বের করছেন কোন রোগীর জন্য অ্যাবিরাটেরোন কাজে আসবে। এআই চিকিৎসকদের কাকে ওষুধ দিতে হবে, কাকে দেওয়া যাবে না, তার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। বিজ্ঞানী গার্ট অ্যাটার্ড বলেন, আক্রমণাত্মক প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাকৃতিক বিকাশ অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। নতুন এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রোগীর জন্য বিশেষভাবে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

টিউমারের ছবি বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই। বিজ্ঞানীরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ১ হাজার জনের বেশি পুরুষের বায়োপসি চিত্রের ওপর পরীক্ষা করেছেন। নতুন এআই পরীক্ষা ব্যবহার করে গবেষকেরা প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ২৫ শতাংশ পুরুষের মৃত্যুঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পেরেছেন। অ্যাবিরাটেরোন টিউমারসহ শরীরের সব টিস্যুতে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকে বাধা দেয়। আরেক বিজ্ঞানী অধ্যাপক নিক জেমস বলেন, নতুন গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, এআই কোন রোগীর জন্য অ্যাবিরাটেরোনের ভালো কাজ করবে, তার তথ্য দিতে পারছে। কার ওষুধের প্রয়োজন হবে, তা সঠিকভাবে দেখানোর জন্য এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সভায় এআই দিয়ে ওষুধের কার্যকর ব্যবহার–সংক্রান্ত গবেষণার ফল উপস্থাপন করা হয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র গ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ