একাধিকবার যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করে ঋতুপর্ণার উপলব্ধি
Published: 2nd, June 2025 GMT
‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ সিনেমা দিয়ে শুরু। এরপর ‘রাতের রজনীগন্ধা’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘রংবেরঙের কড়ি’ ও ‘রাজকাহিনী’ সিনেমাতে যৌনকর্মীর চরিত্রে কাজ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। চরিত্র এক হলেও প্রত্যেকটি সিনেমার গল্প ভিন্ন। এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নতুন উপলব্ধি তার মধ্যে জাগ্রত হয়েছে বলেন জানালেন ঋতুপর্ণা।
সোমবার আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবসে ভারতীয় গণমাধ্যমে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে যৌনকর্মীর চরিত্রে কাজের অভিজ্ঞতা ও এসংক্রান্ত নানা বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।
শুরুতেই ঋতুপর্ণা বলেন, “মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ সিনেমার আগে যৌনকর্মীদের জীবনযাপন নিয়ে একেবারেই অবগত ছিলাম না। তাদের জীবনযাপন বোঝার জন্য যৌনপল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ঘরের মধ্যেও ওদের আন্তরিকতার শেষ ছিল না। যৌনকর্মীর শিশুদের স্কুলের পরিবেশও দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌনকর্মীদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’-এ পুরুলিয়ার একটি যৌনপল্লী দেখানো হয়েছিল। ওরা এখনও ‘মন্দ মেয়ে’ বলেই পরিচিতি পান। ওদের কারা মন্দ করল, সেটা কিন্তু আজও কেউ ভাবে না। আজ বিশ্ব যৌনকর্মী দিবসে এসে সেটাই মনে হয়। আজও কিন্তু এই ছুতমার্গ রয়ে গেছে। রাতে এই যৌনকর্মীদের কাছে যাওয়ার জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে ওঠে।”
ঋতুপর্ণা মনে করেন, যুগের পর যুগ দ্বিচারিতা চলে আসছে। অথচ এই সমাজের জন্যই কিন্তু যৌনকর্মী হয়ে উঠতে হয়। তারা তো স্বেচ্ছায় যৌনকর্মী হন না। নিষ্ঠুর ভাগ্যের পরিহাসে তাদের এই পরিণতি হয়। আবার যৌনকর্মী হয়ে উঠলে, সমাজ তাদের দিকেই আঙুল তোলে।
অভিনত্রেীর ভাষ্য, “রাজকাহিনী’ সিনেমায় অভিনয় করার সময়ে অন্য রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই ছবির প্রেক্ষাপটে ইতিহাস ছিল। তবে সেই যুগেও কিন্তু যৌনকর্মীদের নিয়ে একই রকমের ছুতমার্গ ছিল। ওদের উপর মানুষ অধিকারবোধ দেখাবে। আবার নিজেদের সুবিধামতো দূরেও ঠেলে দেবে। এই দ্বিচারিতা প্রতি যুগেই ছিল, আছে।”
যৌনকর্মীদের রোজগারের বিষয়টিও উঠে এসেছে তার লেখায়। চুরি, ডাকাতি বা খুনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, ‘যৌনকর্মীরা তো দেহের বিনিময়ে ন্যায্য পাওনাটুকুই নেন। তারা তো চুরি, ডাকাতি বা খুন করছেন না। কাউকে ঠকাচ্ছেনও না। কোনও রাখঢাক না করেই তারা রোজগার করছেন। মানুষ তো তাদের কাছে যাচ্ছে। তাই টাকা নিচ্ছেন। টাকা না পেলে তাদের জীবনধারণই বা হবে কীভাবে?’
যৌনকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধার কথা জানিয়ে ঋতুপর্ণা বলেছেন, ‘যৌনকর্মীদের জন্য আমার অশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে। যৌনকর্মী হওয়া তো সহজ বিষয় নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জীবনধারণ করার জন্য তারা এই পেশা বেছে নিয়েছেন। তাদের কাছে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। কেউ হয়তো দ্বিতীয় রাস্তা খুঁজে পেলে নতুন করে জীবন গুছিয়ে নেন। আর বাকিরা হয়তো পরজন্মের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পরজন্মে গোছানো জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখেন।’
প্রত্যেক সিনেমায় যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে জীবন নিয়ে নতুন করে ভেবেছেন এই অভিনেত্রী। সেই অনুভূতিগুলো তার মধ্যে এখনো রয়ে গেছে বলেও জানান ঋতুপর্ণা।
অভিনেত্রীর ভাষ্য, “রাতের রজনীগন্ধা’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘রংবেরঙের কড়ি’ ছবিতেও যৌনকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তরুণ মজুমদারের ‘জনপদবধূ’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু পরিচালক প্রয়াত হওয়ায় সেই কাজটি আর করা হল না। দেবদাসী প্রথার ওপরে সেই ছবির গল্প ছিল। প্রতিবার যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নতুন কিছু উপলব্ধি করেছি। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই প্রবল বেদনা। এই অনুভূতিগুলো আমার ভেতরে রয়ে গেছে।” সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নকর ম য নকর ম দ র মন দ ম য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।