``ওই লাইনটা মনে আছে না, সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অবস্থা এখন ওই রকমই। আপনি কোথায় কাজ করবেন সেটা নির্ধারণ করতে করতে পরের অ্যাসাইনম্এট। ভুল শুধরানোর সময় কই। এজন্যই তো একই ভুল বারবার, লাগাতার।’’ – কথা গুলো বলছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট।
নিজের ক্যারিয়ার জীবনে ৭টির বেশি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়নি তার। সেটাও ঘরোয়া ক্রিকেটে কেবল। তবে পাইলটের অনুমান ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলার কৌশলটাই এখনো আয়ত্বে করতে পারেনি বাংলাদেশ, ‘‘লম্বা সময় পর মনে হচ্ছে এই ফরম্যাটে খেলার কৌশল এখনও অধরা আমাদের ক্রিকেটারদের। অন্তত বর্তমানে যে ধরণের পারফর্যশান্স হচ্ছে তাতে এই প্রশ্নটা উঠবেই। আপনি শেষ ম্যাচটার কথাই যদি ধরেন, ১০ ওভারে একশর ওপরে রান। সেই রান কেন দুইশ হবে না। আপনি ওভারপ্রতি তাহলে দশ করেও নিতে পারছেন না। ঠিক বোলাররা পরপর দুই ম্যাচ দুইশর বেশি রান দিয়েছেন। শেষ ম্যাচেও তেমন কিছু করতে পারেননি। অথচ অভিজ্ঞতায়, সামর্থ্যে তারা কিন্তু পিছিয়ে নেই কারো চেয়ে। তাহলে পারফরম্যান্সটা আসবে না কেন?’’
আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জোর দেওয়ার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনটি ও পাকিস্তান সমান সংখ্যাক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের। পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার আগে আমিরাতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে। প্রতিটি ম্যাচেই ব্যর্থতার নতুন নতুন গল্প। পুরোনো ভুলের বারবার পুনরাবৃত্তি। এর শেষ কোথায় জানা নেই কারো।
স্থানীয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে জাতীয় দলে যুক্ত করা হয় বড় প্রত্যাশা নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ৩-০ ব্যবধানে জয় পাওয়ায় মনে হচ্ছিল দলে প্রভাব রাখতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, সালাউদ্দিনের কার্যকারীতার ঘাটতি সামনে আসছে। পাকিস্তান সিরিজে মোস্তাফিজ, নাহিদ রানা, সৌম্য সরকারকে ছাড়া খেলেছে বাংলাদেশ। তাদের অভাব অনুভূত হয়েছে নিশ্চিতভাবেই। তবে তারা থাকাকালীন সময়ে সাফল্যের জোয়ারে দল ভেসে গেছে তেমনটাও নয়।
পারভেজ হোসেন ইমন বাদে দলে যারা ফিরেছেন তারা খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারেননি। মাহেদী হাসান, শামীম হোসেন পাটোয়ারী বলতে গেলে নিষ্প্রভই ছিলেন। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের পারফরম্যান্স থাকে উড়ন্ত। ম্যাচ হারের পর প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দেশের উইকেটের বিষয়টিকে আরেকবার সামনে আনলেন।
পাকিস্তানে একেবারে স্পোর্টিং উইকেটে খেলেছে দুই দল। যেখানে ব্যাট-বলের লড়াইয়ের ভারসাম্য ছিল। নিজেদের মাঠে পাকিস্তান ছিল ধ্রুপদী। ব্যাট-বলে সমানতালে পারফর্ম করেছে। অথচ শেষ দুইটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ তারাও হেরেছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে স্বস্তি ফিরে পায় তারা। এদিকে বাংলাদেশ ছিল আত্মবিশ্বাসের তলানিতে। আত্মবিশ্বাস ক্রমাগত নিচের দিকেই যাচ্ছে।
উত্তরণের উপায় কী? খালেদ মাসুদের কাছেও উত্তরটা অজানা। তবে বর্তমান স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে তিনি, ‘‘এখন যারা খেলছে তাদের হয়তো অনেক বেশি ম্যাচ সংখ্যা হয়েছে। যেমন লিটনের ১০০ টি-টোয়েন্টি হয়ে গেছে। কিন্তু দেখবেন মাত্র কয়েকটা ইনিংসটি আছে যেগুলো মনে রাখার মতো। পারভেজ মাত্র শুরু করলো। তানজিদকে নিয়েও আশাবাদী। হাসান, শরিফুল তারা ভালো খেলোয়াড়। তাদেরকেই ঘষে মেঝে ঠিক করতে হবে। আরেকটু সময় দেওয়া উচিৎ বলে মনে করছি।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ধবলধোলাইয়ের শঙ্কা, সম্মান বাঁচানোর মিশনে বাংলাদেশ
একদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নেতৃত্ব পরিবর্তনের উত্তেজনা, অন্যদিকে মাঠে টানা দুই টি-টোয়েন্টিতে হারের হতাশা। সব মিলিয়ে অস্থির সময় পার করছে দেশের ক্রিকেট। এমন এক সময়েই আজ রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য একটাই, ধবলধোলাই এড়ানো।
নতুন বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায়ই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ দল। স্বাভাবিকভাবেই এত অল্প সময়ে মাঠের পারফরম্যান্সে তার প্রভাব পড়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই দিন যেতে না যেতেই ভক্তদের প্রত্যাশার ভার তার কাঁধে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে হারলেই তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের মতো দলের কাছেও হারের পর পাকিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হলে তা হবে লিটন দাসদের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।
দলের দুরবস্থার মূল কারণ ব্যাটিং। প্রথম দুই ম্যাচে ভালো সূচনা করেও মাঝপথে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। দুই ম্যাচেই পাকিস্তান আগে ব্যাট করে ২০১ রানের বড় পুঁজি গড়লেও জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে অলআউট হয় ১৬৪ রানে এবং দ্বিতীয়টিতে ১৪৪ রানে।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের আক্রমণাত্মক মেজাজ বিপাকে ফেলেছে সফরকারীদের। তবে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা, বিশেষ করে ডেথ ওভারে। দুই ম্যাচেই শেষ দিকে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন তারা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আগ্রাসনের অভাব স্পষ্ট। ব্যাটাররা বারবার ছন্দপতনের শিকার হয়েছেন, রান তাড়ায় চাপ নিতে পারেননি। এ অবস্থায় কেউ কেউ মনে করছেন, টার্গেট ডিফেন্ড করাই হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বেশি উপযোগী কৌশল।
আইসিসির সর্বশেষ র্যাংকিং বলছে, টি-টোয়েন্টিতেও ১০ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই সম্মান বাঁচাতে হলেও আজ জয়ের বিকল্প নেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। আজকের ম্যাচের পারফরম্যান্সেই জানা যাবে, শেষ পর্যন্ত ধবলধোলাই এড়াতে পারে কি না বাংলাদেশ।