কাঁথা গায়ে বিছানায় পড়ে ছিল মা ও দুই ছেলের মরদেহ
Published: 2nd, June 2025 GMT
মায়ের বাড়ি থেকে গতকাল রোববার দুপুরে শ্বশুরবাড়িতে যান নাসরিন বেগম (১৯)। এরপর আজ সোমবার কয়েক দফা মুঠোফোনে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ কল ধরেননি। পরে বেলা দুইটার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আবার মায়ের বাড়িতে আসেন নাসরিন। ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান, বিছানার ওপর কাঁথা গায়ে শুয়ে আছেন মা ও দুই ভাই। বিছানার পাশে বসে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে শক্ত অনুভূত হওয়ায় কাঁথা সরিয়ে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, ওই এলাকার মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৪২) এবং তাঁর দুই ছেলে মো.
নাসরিন বেগমের আত্মীয়স্বজনেরা জানান, গতকাল সকালে উপজেলার আমতা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে মা ও ভাইদের দেখতে আসেন নাসরিন বেগম। দুপুরে আবার চলে যান। যাওয়ার সময় ভুল করে নিজের মুঠোফোন রেখে মায়ের মুঠোফোন নিয়ে যান। আজ সকালে মায়ের মুঠোফোন থেকে কয়েক দফায় নিজের নম্বরে কল করে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন নাসরিন। পরে বেলা দুইটার দিকে তিনি মায়ের বাড়িতে আসেন। এসে মা ও দুই ভাইকে একসঙ্গে মৃত অবস্থায় দেখতে পান নাসরিন। এরপর তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। পরে ধামরাই থানা–পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
নাসরিন বেগম বলেন, ‘বাড়িতে এসে দেখি, দরজা লাগানো। ঘরে ফ্যান চলছিল। আমি ভেবেছি, মা শুয়ে আছেন। একটু উঁচু করে বাইরে থেকে দরজা খোলা যায়, সেভাবে দরজা খুলেছি। ভেতরে ঢুকে মায়ের পায়ের কাছে বসে মায়ের পায়ে হাত দিই। মায়ের পায়ে সব সময় পানি জমে থাকায় নরম থাকত। কিন্তু হাত দিয়ে দেখি শক্ত। তখন কাঁথা টান দিয়ে সরিয়ে দেখি, বড় ভাই ও ছোট ভাই পাশে শোয়া। তখন মাকে জড়িয়ে ধরেছি। দেখি, সে মারা গেছে। দুই ভাইও মারা গেছে। কীভাবে বা কেন মারা গেছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
নারগিস আক্তারের স্বামী আগেই মারা গেছেন। নারগিসের ছোট বোন কাজলী আক্তারের দাবি, তাঁর বোন ও দুই ছেলেকে শ্বশুর-শাশুড়ি হত্যা করেছেন। বাড়ির জায়গা আর বাড়ি নিয়ে ঝামেলা ছিল, এর জের ধরেই তাদের হত্যা করা হয়েছে।
তবে নিহত নারগিসের শ্বশুর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘নাতনি বলল যে সে তার মাকে বারবার ফোন করেছে, কিন্তু তার মা ফোন ধরে নাই। সে বাড়িতে এসে দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকে দেখে যে তারা মরে পড়ে আছে। তাদের সঙ্গে কারও কোনো ঝগড়া ছিল না। বিবাদ ছিল না। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর দুই নাতিকে নিয়ে তার মা বাড়িতে থাকত। কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছিল না।’
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বলেন, বেলা দুইটার দিকে তিনজনের মৃত্যুর খবর পায় পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিছানার ওপরে মা ও দুই ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। তাঁদের শরীরে প্রাথমিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ দেখে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। কেন এবং কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি জানতে কাজ করছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
আগের দিন রোহিত শর্মার রেকর্ড ভেঙেছিলেন বাবর আজম। লাহোরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংস খেলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ককে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে কেড়েছেন আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলির রেকর্ড। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবরের এটি ৪০তম ৫০ ছোঁয়া ইনিংস। ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে এত দিন বাবরের সঙ্গে রেকর্ডটির যৌথ মালিক ছিলেন কোহলি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া বাবরের ইনিংসে ভর করেই লাহোরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা ৪ উইকেট জিতেছে পাকিস্তান। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজটা পাকিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচ হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়েই সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ১৩৯ রান। রানটা ৬ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে পাকিস্তান।
রান তাড়ায় ইনিংসের ১১তম বলে ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর ব্যাটিংয়ে নামেন এরপরই। দ্বিতীয় উইকেটে সাহিবজাদা ফারহানকে নিয়ে ৩৬ রান জুটি গড়া বাবর তৃতীয় উইকেটে সালমান আগাকে নিয়ে ৫২ বলে যোগ করেন আরও ৭৬ রান। ২৬ বলে ৩৩ রান করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান যখন ফেরেন ২৭ বলে ২০ রান দরকার পাকিস্তানের।
৫ রান যোগ হওয়ার পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন বাবর ৪৭ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করা বাবর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর ১৫ রানের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের অপেক্ষা একটু লম্বা করেছে পাকিস্তান।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ৩৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন ওপেনার রিজা হেনড্রিকস। এ ছাড়া অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা ১৪ বলে ২৯ ও অলরাউন্ডার করবিন বশ ২৩ বলে করেন ৩০ রান। পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদি ২৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
দুই দল এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ মঙ্গলবার ফয়সালাবাদে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরদক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৯/৯ (হেনড্রিকস ৩৪, বশ ৩০*, ফেরেইরা ২৯, ব্রেভিস ২১; আফ্রিদি ৩/২৬, তারিক ২/২৬, ফাহিম ২/২৮)।পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (বাবর ৬৮, সালমান ৩৩, ফারহান ১৯; বশ ২/২৪, উইলিয়ামস ২/২৬)।
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩-ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।