পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

সোমবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগরে শাহজাহানপুর, খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন হাট, গাবতলি গরুর হাট, দনিয়া কলেজের পূর্বপাশ ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসা সংলগ্ন হাটে মোট চারটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

এ সময় হাটে উপস্থিত হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ব্যাপারীদের সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। হাটগুলোতে কোরবানির পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য লিফলেট বিতরণ এবং মাইকে প্রচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের দায়ে ২ জনের কারাদণ্ড 

লালপুরের এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে অভিযানের অভিযোগ

একইদিন বাংলা কলেজ ও টেকনিক্যাল এলাকায় কালো ধোঁয়া নির্গমনের বিরুদ্ধে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আটটি মামলার মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং ১৭টি হর্ন জব্দ করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৬ অনুযায়ী একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় তিনটি মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও সাতটি হর্ন জব্দ করা হয়।

২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২ জুন পর্যন্ত সারা দেশে পরিবেশ দূষণ রোধে ৯৯৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব অভিযানে ২ হাজার ৩৬১টি মামলার মাধ্যমে মোট ২৫ কোটি ২৬ লাখ ৩১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযানগুলোতে ৪৭৯টি ইটভাটার চিমনি ভেঙে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ, ২১৬টি ভাটা বন্ধে নির্দেশনা, ১৩২টি ভাটার কাঁচা ইট ধ্বংস, ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, দুইজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে আটটি ট্রাক সিসা/ব্যাটারি গলানোর যন্ত্রপাতি জব্দসহ কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দূষণবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ইভি অবকাঠামো এবং দেশের সবুজ ভবিষ্যৎ  

টেকসই ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বিশ্বনেতাদের ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ আমরা এমন পৃথিবী গড়ে তুলব– যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, বেকারত্ব থাকবে না এবং কার্বন নিঃসরণ হবে শূন্য। ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষের জীবনযাত্রায় ‘শূন্য কার্বন’ নিঃসরণ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বিদ্যুচ্চালিত বাহন বা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ শিল্পখাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা অবিশ্বাস্যভাবে কমে আসবে; ফলে কমবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ– যা সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে।  


তবে কার্যকর, সাশ্রয়ী, সহজপ্রাপ্য ও নির্ভরযোগ্য চার্জিং অবকাঠামো না থাকলে ইভি খাত কেবল একটি সীমিত গণ্ডির মধ্যেই আটকে থাকবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে বর্তমানে মাত্র ১৪টি ইভি চার্জিং স্টেশন রয়েছে। ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা পূরণে এ সংখ্যা নগণ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল ও ব্যস্ত শহরের অন্যতম প্রধান নাগরিক সমস্যা হচ্ছে বায়ুদূষণ ও যানজট। এ ক্ষেত্রে চার্জিং অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে সার্বিকভাবে ইভি খাতের সম্ভাবনার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।   


চার্জিং অবকাঠামো গড়ে তোলার আগে কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি। যেমন– কৌশলগত অবস্থান ও ইন্টার অপারেবিলিটি। চার্জিং পয়েন্টগুলো এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে, যেখানে যানবাহনের চলাচল বেশি। যেমন– বাণিজ্যিক এলাকা, মহাসড়ক, আবাসিক এলাকা, হোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। বিওয়াইডি, মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং অডির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চার্জ ও ক্র্যাক প্লাটুনের মতো তৃতীয় পক্ষের সংস্থার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই হোটেল, পর্যটন এলাকা, মহাসড়ক ও বাণিজ্যিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চার্জিং স্টেশন স্থাপন শুরু করেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত এ উদ্যোগগুলোর পরিসর বিস্তৃত করা প্রয়োজন, সরকারকেও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় ইভি অবকাঠামো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।


উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হতে পারে সব অংশীজনের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি সেবাদাতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা– সবাইকে একসঙ্গে এক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন আনা যেমন সম্ভব, তেমনি যৌথ বিনিয়োগে কমে আসবে অবকাঠামোগত ব্যয় এবং এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ইভি ক্রেতারাও এ খাতের ওপর আস্থা পাবেন– যা সার্বিকভাবে ইভি ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 
এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) এ খাতের বিকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন– পিপিপির অধীনে বেসরকারি খাত উদ্ভাবন ও মূলধনি বিনিয়োগ নিশ্চিত করবে; অন্যদিকে সরকার নিশ্চিত করবে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালাবিষয়ক সহায়তা ও প্রণোদনা। এ ক্ষেত্রে নেপালের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০২৩ সালে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ৫১টি দ্রুতগতির চার্জিং স্টেশন স্থাপন করে। গ্রিড লাইন সম্প্রসারণ ও ২০০ কেভিএ সক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার বসানোর মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগগুলোর সম্প্রসারণেও ভূমিকা রাখে এনইএ।   


বাংলাদেশও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরতা যত কমবে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের দিকে আমরা ততটাই এগিয়ে যাব। কৌশলগত অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের এ বিষয়ে কাজ করা উচিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সাতটি দেশ থেকে ১৪ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে। এ ক্ষেত্রে খরচ হয় ৯.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকার দেশের ইভি কাঠামো শক্তিশালী করে তোলার ব্যাপারে মনোযোগী হতে পারে। সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগ এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।       


চার্জিং স্টেশনসহ একটি শক্তিশালী ইভি অবকাঠামো গড়ে তুলতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহও প্রয়োজন; যা আবার গ্রিড আধুনিকায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংযোগ এবং স্মার্ট এনার্জি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ধরনের যৌথ বিনিয়োগ ইভি শিল্পের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ইভি খাতের বিকাশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশজুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে; সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, জ্বালানি সেবা ও ব্যাটারি প্রযুক্তির মতো সম্পর্কিত শিল্পেও প্রবৃদ্ধি আনবে। গোল্ডম্যান স্যাকসের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে নতুন গাড়ি বিক্রির অর্ধেকই হবে ইভি।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা ছাড়াও জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে ইভি খাতের বিকাশ। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হলো পেট্রোল ও ডিজেলচালিত যানবাহন। ইভির ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়লে বায়ুর মান উন্নত হবে, স্বাস্থ্যসেবার খরচও হ্রাস পাবে।


তাই শক্তিশালী ইভি অবকাঠামো গড়ে তুলতে যত দ্রুত সম্ভব সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই– একটি জাতীয় ইভি অবকাঠামো রোডম্যাপ তৈরি করুন, যেখানে আর্থিক প্রণোদনা ও উদ্ভাবন নিশ্চিতে নীতিগত সহায়তার উল্লেখ থাকবে। চার্জিং স্টেশন নির্মাণের জন্য স্বল্পমূল্যে জমি প্রাপ্তি, বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়ন এবং চার্জিং যন্ত্রপাতির আমদানিতে শুল্ক ছাড়– এ ধরনের সুবিধা এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। পাশাপাশি ইভি খাত জোরদারকরণে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণেই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল পরিবহন খাত গড়ে তোলা সম্ভব; যার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে সবার জন্য সবুজ ভবিষ্যৎ।  


মিঠুন ভট্টাচার্য: হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, বিওয়াইডি বাংলাদেশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ