ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ জানিয়েছেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুন কেন, এমন প্রশ্ন তুলে বাসদের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, জুলাই মাসের মধ্যেই তারা প্রস্তুত। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে এবং নির্বাচনের তারিখ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবকে এগিয়ে নিতে হবে এবং বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে।’
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা বলেছি যে প্রধান উপদেষ্টা জাপান গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছে, সেটা একটি পার্টিকে ব্লেম করা হয়েছে। বন্দর ও মানবিক করিডর দেওয়ার যে চক্রান্ত, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়। আমরা বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ সেটা প্রমাণ করতে হবে।’
এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বাসদ। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, ‘তিন মাস ধরে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, সেই তিন মাসের আলোচনার সারসংক্ষেপ কী? কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ চায় বাংলাদেশ জাসদ
বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.
এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদকে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাসদের এই নেতা বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে যারা নির্বাচনের ডিউটি করবে, তাদেরও নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। যদি সংস্কারের আলোচনা করতে হয়, তাহলে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশের সঙ্গে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি করা যাবে না। এগুলো যদি আমরা নিশ্চয়তা পাই, তাহলে সংস্কারের আলোচনা সফল হতে পারে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে কারা, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাপা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ মন্তব্য করেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দল ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে বা স্বাক্ষর করে একধরনের ফাঁদে পড়ে গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। এখানে প্রতারক ও প্রতারণা শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এ রকম সংস্কার চাইনি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঐকমত্য তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, কমিশন ৫৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দলকে বাদ দিয়েছে। যে দলগুলো সেখানে গেছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ আছে। এক ভাগকে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। অন্য আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পরে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে।
বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বলে দাবি করেছেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কারণ, নির্বাচিত সরকার সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করেছে ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। এই মুহূর্তে দেশে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, তার ব্যাপারে তথ্য উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, তাঁরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কথামতো প্রশাসন সাজিয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি আছে। এই তিন দলের বাইরে অন্য কোনো দল যদি ভোটে আসে, এই প্রশাসনিক কাঠামো সেই দলকে সুষ্ঠু ভোট হতে দেবে না।
গণভোটের দাবি নজিরবিহীন উল্লেখ করে শামামী হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে এই মুহূর্তে গণভোট কোনো প্রভিশনে নেই। বর্তমানে গণভোটের যে দাবি উঠেছে, সংসদে পাস হওয়ার আগে এই দাবি বাস্তবায়ন হলে ঐকমত্য কমিশনকে সংসদের মর্যাদা দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশন সার্বভৌম নয়, নির্বাচিত নয় ও সংসদ নয়। সংসদকে এড়িয়ে গিয়ে কোনো আইন পাস করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
এ সময় জাপার কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব হাজী আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামানসহ জাপা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।