মায়ের জানাজায় অংশ নিতে প্যারোলে মুক্তি চেয়েও পাননি সাবেক এমপি আসাদ
Published: 2nd, June 2025 GMT
মায়ের জানাজায় অংশ নিতেও প্যারোলে মুক্তির অনুমতি পাননি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান। সোমবার রাত সোয়া আটটায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে তাঁকে দূর থেকে মৃত মায়ের মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। তার অন্য চার ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় তারাও আত্মগোপনে । তাই তারাও পাননি মায়ের জানাজায় অংশ নিতে। মায়ের মুখটিও শেষবার দেখার সুযোগ পাননি তারা।
গত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছিলেন আসাদ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের কিছুদিন পর তিনি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। আসাদুজ্জামানের মা সালেহা বেগম সোমবার বিকেলে ৮০ বছর বয়সে মারা যান।
তার স্বজনরা জানান, মায়ের মৃত্যুর পর বড় ছেলে আসাদুজ্জামান প্যারোলে মুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কারাফটকে মৃত মায়ের মুখটি শেষবার একনজর দেখার।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান বলেন, আসাদুজ্জামানকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। মানবিক কারণে মরদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে করে জেলগেটে এনে দূর থেকে তাকে দেখানো হয়েছে।
প্যারোলের মুক্তি চেয়েও না পাবার বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারকে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
আসাদুজ্জামান রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তারা সাত ভাই–বোন। মায়ের মুখ শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ হয়েছে ছেলে আক্তারুজ্জামানের। তিনি প্রাইভেট কার চালক। তিনি রাজনীতিতে জড়াননি।
স্বজনেরা জানান, বিকেলে বাড়ি গিয়ে মৃত মায়ের মুখ দেখেছিলেন আক্তারুজ্জামান। তবে নিরাপত্তার কারণে তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় রাজশাহী নগরের মহিষবাথান গোরস্তানের পাশে জানাজা শেষে সালেহা বেগমের লাশ দাফন করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এমপ আওয় ম ল গ আস দ জ জ ম ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার কাছে গুম কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদন জমা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট জমা দিয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিস। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
প্রতিবেদন জমার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি ঘিরে শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিকভাবেও আগ্রহ রয়েছে।”
তিনি বলেছেন, “কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! আমাদের সমাজের ভদ্রলোকেরা, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আপনারা যা যা কিছু পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত। গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। এই ধরনের বন্দিশালা কেমন হয়, তিন ফিট বাই তিন ফিট খুপরির মধ্যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে থাকার যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত।”
তিনি কমিশন সদস্যদের কাছে প্রতিবেদনের আশু করণীয়গুলো চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন, যাতে সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো শুরু করতে পারে।
কমিশনের এক সদস্য প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, “ঘটনাগুলো এতটাই ভয়াবহ যে, জড়িত অনেক কর্মকর্তা ও অন্যরাও অনুশোচনায় ভোগেন। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আত্মশুদ্ধির একটা প্রচেষ্টা হিসেবে। দুজন অফিসার লিখিতভাবে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন। চিঠিগুলো গণভবনে পাওয়া গেছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এই চিঠির কথা স্বীকারও করেছেন।”
কমিশন সদস্যরা জানান, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো তিন শতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ আছেন বলেও জানান গুম কমিশনের সদস্যরা।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান কমিশন প্রধান।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে কেউ সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন সংশোধন করে এটিকে পাঁচ বছর করতে হবে।
অতি দ্রুত যাতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় জানাতে কমিশনকে পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা ভয়-ভীতি, নানা রকম হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। এ দেশের মানুষের জন্য আপনারা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে যারা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন, আপনারা তাদের অনুপ্রেরণা।”
ঢাকা/হাসান/রফিক