নির্বাচনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার: আন্দালিভ রহমান পার্থ
Published: 3rd, June 2025 GMT
নির্বাচনই বাংলাদেশের বড় সংস্কার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি বলেন, নির্বাচন দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না এবং সবকিছু শেষও হবে না। কিন্তু নির্বাচনই জনগণকে ক্ষমতায়িত করার একমাত্র পথ। নির্বাচনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার। আর বাকি সব সংস্কার, সেটা সময়ের ব্যাপার।
গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) আয়োজনে ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন আন্দালিভ রহমান। আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা আমরা বলি নাই, আপনি বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। আমরা বলেছি, আপনার সেই ওয়াদা আপনি রাখেন। আমাদের মুখ থেকে ডিসেম্বরের কথা আসে নাই।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘আপনার ক্ষমতার উৎস জনগণ। যেহেতু সংসদ নাই, আপনার ক্ষমতার উৎস আমরা রাজনীতিবিদেরা, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ীরা। আজকে আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন, সাধারণ মানুষের কি সংস্কারের একটা প্রস্তাব তিনি আসছে। আজকে দুই লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে বাংলাদেশে, তার সংস্কার তো কোনো কথা বলে নাই। আজকে ব্যবসায়ীরা হাহাকার, এনবিআর দিয়ে এবং বিভিন্ন সংস্কার দিয়ে তাদেরকে শেষ করে ফেলাচ্ছে, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে কথা বলার কোনো জায়গা নাই।’
বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ বলেন, ‘আজকে কেন আর্মির এভাবে কথা বলতে হয়। আর্মির সাথে দূরত্ব কে সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলের সাথে দূরত্ব কে সৃষ্টি করেছে। আজকে করিডরের কথা শুনে কনফিউশন কেন, আমরা তো কনফিউশন করি নাই। কনফিউশন আপনি নিয়ে আসছেন।’
আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় নাই। আপনি মানুষের ক্ষমতাটা মানুষের হাতে দিয়ে দেন, মানুষ আপনাকে সব সময় স্মরণ রাখবে। আমরাও আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখব। আমি আগেও বলি সাহেব, পলিটিকস আর ইকোনমিকস এক না। পলিটিকসে দুই আর দুই, ২২ হয়, ইকোনমিকসে দুই আর দুই, ৪ হয়।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফওজুল হাকিম, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।