নির্বাচনই বাংলাদেশের বড় সংস্কার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি বলেন, নির্বাচন দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না এবং সবকিছু শেষও হবে না। কিন্তু নির্বাচনই জনগণকে ক্ষমতায়িত করার একমাত্র পথ। নির্বাচনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার। আর বাকি সব সংস্কার, সেটা সময়ের ব্যাপার।

গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) আয়োজনে ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন আন্দালিভ রহমান। আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা আমরা বলি নাই, আপনি বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। আমরা বলেছি, আপনার সেই ওয়াদা আপনি রাখেন। আমাদের মুখ থেকে ডিসেম্বরের কথা আসে নাই।’

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘আপনার ক্ষমতার উৎস জনগণ। যেহেতু সংসদ নাই, আপনার ক্ষমতার উৎস আমরা রাজনীতিবিদেরা, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ীরা। আজকে আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন, সাধারণ মানুষের কি সংস্কারের একটা প্রস্তাব তিনি আসছে। আজকে দুই লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে বাংলাদেশে, তার সংস্কার তো কোনো কথা বলে নাই। আজকে ব্যবসায়ীরা হাহাকার, এনবিআর দিয়ে এবং বিভিন্ন সংস্কার দিয়ে তাদেরকে শেষ করে ফেলাচ্ছে, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে কথা বলার কোনো জায়গা নাই।’

বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ বলেন, ‘আজকে কেন আর্মির এভাবে কথা বলতে হয়। আর্মির সাথে দূরত্ব কে সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলের সাথে দূরত্ব কে সৃষ্টি করেছে। আজকে করিডরের কথা শুনে কনফিউশন কেন, আমরা তো কনফিউশন করি নাই। কনফিউশন আপনি নিয়ে আসছেন।’

আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় নাই। আপনি মানুষের ক্ষমতাটা মানুষের হাতে দিয়ে দেন, মানুষ আপনাকে সব সময় স্মরণ রাখবে। আমরাও আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখব। আমি আগেও বলি সাহেব, পলিটিকস আর ইকোনমিকস এক না। পলিটিকসে দুই আর দুই, ২২ হয়, ইকোনমিকসে দুই আর দুই, ৪ হয়।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফওজুল হাকিম, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চনই ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে অনলাইন পশুর হাটে ৪ হাজার খামারি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পেজে গত ২০ মে দেশি লাল গরু ‘তুফান’-এর ছবি পোস্ট করেছিলেন আরবিএস অ্যাগ্রো ফার্মের কর্ণধার রবিউল হক চৌধুরী। পরদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত আবুল কালাম আজাদের ফোন পান তিনি। জানান, গরুটি পছন্দ হয়েছে। দরদাম মিলে গেলে কিনে নেবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ।

২১ মে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে খামারে হাজির হন আবুল কালাম আজাদ। দরদাম করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন গরুটি। এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরবিএস অ্যাগ্রো ফার্মের কর্ণধার রবিউল হক চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার আমেজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি নিয়মিত কোরবানির পশুর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এতে দারুণ সাড়া মিলেছে। ৬০টির মধ্যে ৩৫টিই বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকেই অনলাইনে পছন্দ করে রাখছেন। পরে খামারে এসে যাচাই করে কিনে নিচ্ছেন।

রবিউল হক চৌধুরী একজন পেশাদার ক্রিকেট আম্পায়ার। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই পেশা ছেড়ে ২০১৮ সালে গরুর খামার দেন। শুরুতে ১২টি গরু ছিল। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। এর মধ্যে করোনাকালে তিনি অনলাইনে ৫ কেজি করে মাংস বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। করোনার ঘরবন্দী সময়ে সাড়াও মেলে বেশ।

রবিউল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এ বছর চট্টগ্রামের লাল গরু (আরসিসি), শাহি ওয়াল, হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। তাঁর খামারে সবচেয়ে দামি গরু সাড়ে চার লাখ টাকা, আর সর্বনিম্ন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

অনলাইনে দেখে গবাদিপশু কেনাকাটা এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকে হাটের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই খামার থেকে গরু কিনে রাখছেন। কেনা গরু খামারেই রাখা যায়। অবশ্য খামারে গরুর দামে ভারসাম্য থাকলেও গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশিমোহাম্মদ আলমগীর, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম

শুধু রবিউল হক চৌধুরী নন, চট্টগ্রাম ক্যাটেল ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব বলছে, অন্তত ৪ হাজার খামারি ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে সক্রিয়। তাঁরা নিয়মিত কোরবানির পশুর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। কেউ কেউ দাম উল্লেখ করে লিখছেন, ‘আলোচনা সাপেক্ষে’। ক্রেতারা হাটের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই পছন্দের গরু কিনছেন। এ বিক্রি চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

আরও পড়ুনঅনলাইনে চলছে কোরবানির হাট০২ জুন ২০২৫

অনলাইনে সক্রিয় থাকার সুফল কেমন, তা বোঝা যাবে সিটি অ্যাগ্রোর কর্ণধার এনামুল হকের বর্ণনায়। এবার ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতের ১৩০টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ১১০টি গরু বিক্রি হয়েছে। সব কটি গরুর ছবি, ভিডিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। এর মধ্যে ‘বাঁধা’ ক্রেতা যেমন গরু নিয়েছেন, ঠিক তেমন অনলাইনে দেখে গরু কিনেছেন অনেকে।

২০২০ সালে খামারে পশু লালন-পালন শুরু করেন এনামুল হক। ফেসবুকে ‘সিটি অ্যাগ্রো’ নামে পেজ খুলে প্রচারণা শুরু করেন। করোনাকালে মূলত ব্যবসা ও পরিচিতি পান। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিক্রি বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে খামারের আকার। এনামুল হক জানান, এবার সবচেয়ে বড় গরু বাহাদুরের দাম উঠেছিল সাত লাখ টাকা। অনলাইনে দেখে এক ক্রেতা সম্প্রতি এটি কিনে নেন। এ ছাড়া ১০টির মতো গরু বিক্রি করেছেন সরাসরি ওজন (লাইভ ওয়েট) পদ্ধতিতে। প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়েছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা।

চট্টগ্রামের একটি খামারে বিক্রির জন্য রাখা পশু। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ