ভারতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে মোদিকে ১৬ দলের চিঠি
Published: 3rd, June 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে ১৬টি বিরোধী দল একযোগে চিঠি দিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিরোধীদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সংসদের কক্ষে সেসব বিষয় সংসদ সদস্যরা উত্থাপন করতে চান। খোলাখুলি আলোচনা করতে চান।
আজ মঙ্গলবার দিল্লিতে বৈঠকের পর ১৬ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠি পাঠান। ওই তালিকায় অবশ্য আম আদমি পার্টি (আপ) নেই। কেন নেই, সেই ব্যাখ্যায় না গিয়ে তৃণমূল নেতা ডেরেক ওব্রায়ান জানিয়েছেন, আগামীকাল বুধবার একই দাবি জানিয়ে আপ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবে।
পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার পর কেটে গেছে দেড় মাস। এই সময়ের মধ্যে পরপর দুটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোনোটিতেই উপস্থিত থাকেননি। সেই থেকে সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি বিভিন্ন বিরোধী দল জানিয়ে আসছে; কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
এবার ১৬টি দলের পক্ষ থেকে একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হলো। আজ মঙ্গলবার এই নিয়ে দিল্লিতে আলোচনায় বসেন বিভিন্ন দলের নেতারা। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ ও দীপেন্দ্র হুডা, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ওব্রায়ান, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, আরজেডির মনোজ ঝা, শিবসেনার (উদ্ধব) সঞ্জয় রাউতরা। চিঠিটি পাঠানো হয় বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষে। তাঁদের দাবি, জুন মাসেই ওই অধিবেশন ডাকা হোক।
বৈঠকে ডিএমকের প্রতিনিধিরা ছিলেন না। আজ দলটির প্রতিষ্ঠাতা এম করুণানিধির জন্মবার্ষিকী ছিল। ছিল না এনসিপির (শারদ পাওয়ার) কোনো নেতাও। এনসিপি এই বিষয়ে বিশেষ অধিবেশন ডাকার পক্ষপাতী নয়। এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বিদেশ সফর করছেন।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, জুন মাসে বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো উদ্যোগ এখনো নেই। জুলাই মাসে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন বসার কথা। সরকার চায় পেহেলগাম–কাণ্ড বা অপারেশন সিঁদুর নিয়ে যা কিছু আলোচনার, তখনই হোক।
ওই সূত্র জানায়, বিরোধীদের চাপ ও বিরূপ সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত কিছু করেননি। এই ১১ বছরে শুধু কৃষি আইন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সূত্রটির ধারণা।
পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের পর বিরোধী ঐক্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ৫৯ জন সংসদ সদস্যের সাতটি দল মোট ৩৩টি দেশ সফর করছে।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রতিনিধিরা সফর শেষে ফিরে এলে আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। তবে এর আগে বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সরকার ঠিক করেছে, সাংসদদের এই সফর নিয়ে একটি নথি প্রকাশ করবে।
সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় স্বার্থে দেশের ঐক্যবদ্ধতার প্রমাণ রাখতে পেরেছেন। এই ক্ষেত্রে তিনি সফলও। সরকারি এক সূত্রের কথায়, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে এই সাফল্য কি প্রধানমন্ত্রী নষ্ট হতে দেবেন? অবশ্যই তা তিনি চাইবেন না। কারণ, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করবেন। সরকারকে নানা বিষয়ে জবাবদিহিতে বাধ্য করাবেন। সেই সুযোগ বিরোধীদের না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অপারেশন সিঁদুরে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার কথা তিন সপ্তাহ পর প্রথম কবুল করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। সিঙ্গাপুরে এক বিদেশি গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই ক্ষতির কথা স্বীকার করেন।
আজ মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে চৌহান সিঙ্গাপুরে বলা কথার রেশ ধরে বলেন, যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি নয়, ফলটাই আসল। তিনি বলেন, ক্রিকেট ম্যাচে দুর্দান্ত জেতার পর দল কটা উইকেট হারাল, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ম্যাচের ফল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেতু দেবে আখাউড়া-কসবা সড়কে যান চলাচল বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার মোগড়া এলাকায় আখাউড়া-কসবা সড়কের কাকিনা খালের ওপরের সেতু মধ্যরাতে মাঝ বরাবর দেবে গেছে। এতে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির মাঝখানে দেবে গেছে। দেবে যাওয়া অংশের দুই পাশে রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুর দুই পাশে সড়কের সংযোগেও ফাটল ধরেছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেতুর দুই পাশে বাঁশ বেঁধে দুর্ঘটনা এড়াতে জনস্বার্থে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেতুটি পরিদর্শন করেছেন।
আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) বলছে কাকিনা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। তবে ঈদুল আজহার ছুটি থাকায় এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, সেতুর নির্মাণ সাল ও নির্মাণ ব্যয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কাউছার চৌধুরী বলেন, রাতে কোনো এক সময় হয়ত ভারী কোনো গাড়ি চলাচলের জন্য সেতুর মাঝ বরাবর পিলার দেবে গেছে। এই পথে বহু মানুষের যাতায়াত। সেতুটি দেবে যাওয়ার ফলে আখাউড়া-কসবাসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
সেতুর পাশে হানিফ মিয়া নামে বাঁশ ব্যবসায়ী বলেন, ফজরের নামাজের পর এসে দেখি সেতুর এই অবস্থা। পরে বেলা ১১টার পর প্রশাসনের লোকজন এসে সেতুর দুই পাশে বাঁশ বেঁধে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আক্তার মিয়া বলেন, কাকিনা সেতুর মাঝের অংশ দেবে যাওয়ায় সকাল থেকে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। এতে করে প্রায় ৫-৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তার।
উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, কাকিনা সেতুর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে নতুন সেতুর জন্য কাগজপত্র পাঠাবো। আপাতত কী করবো, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সংযোগ কাকিনা খালের ওপর নির্মিত সেতু দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জনস্বার্থে যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। মনিয়ন্দ এলাকায় যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক হিসেবে গোয়াল গাঙ্গাইল গ্রাম আর কসবা যাতায়াতের জন্য ধরখার সড়ক ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। ঈদের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।