গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে শেরপুরের উদ্দেশে রওনা দেন আমজাদ মণ্ডল (৬৫)। গাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, এক ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতি। যাত্রাপথে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন সবাই। কিন্তু তাদের এই ঈদযাত্রার আনন্দে মুহূর্তে নেমে আসে বিষাদ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে পাশে থেমে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয় মাইক্রোবাস। এতে মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমজাদ ও তাঁর দুই ছেলে। আহত হন তিনজন।
মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অন্য দু’জন হলেন– আমজাদ মণ্ডলের বড় ছেলে রাহাত মণ্ডল (২৬) ও ছোট ছেলে অতুল মণ্ডল (১৪)। আহত মাকসুদা বেগম (৬০), নিহত রাহাতের স্ত্রী মরিয়ম (২৫) ও গাড়িচালক নাজমুলকে (৪০) ঘটনার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন। একই গাড়িতে থাকলেও মাকসুদার মেয়ে ও মরিয়মের দুই সন্তান অক্ষত রয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্বজন। তারা জানান, আমজাদ মণ্ডলের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরভাবনা কান্দাপাড়া গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। কনস্ট্রাকশন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
স্থানীয়দের বরাতে বাসাইল থানার ওসি জালাল উদ্দিন জানান, সকাল ৯টার দিকে বাসাইল উপজেলার করাতিপাড়া এলাকায় পৌঁছায় আমজাদ মণ্ডলদের বহনকারী মাইক্রোবাস। সেখানে মহাসড়কের পাশে একটি ট্রাক থেমে ছিল। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস নিয়ে সজোরে ওই ট্রাকে ধাক্কা দেন। এতে মাইক্রোবাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই আমজাদ ও তাঁর দুই ছেলে প্রাণ হারান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাতে স্বজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে আমজাদ মণ্ডলের গ্রাম চরভাবনা কান্দাপাড়ায় মাতম চলছে। তাঁর নাতি চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘নানা প্রতিবছর বড় ঈদে বাড়ি আসেন। সোমবার কোরবানির গরু কেনার জন্য দেড় লাখ টাকা পাঠান। গরুও কেনা হয়েছে। সকালে খবর পেলাম নানা ও তাঁর দুই ছেলে মারা গেছেন।’ তিনি জানান, কৃষক পরিবারটি আমজাদ মণ্ডলের আয়ে চলত। তাঁর মৃত্যুতে এই পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত ত ন পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে ট্রেন, ছোট্ট আরিফুলের কষ্ট
চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিরুল ইসলামের বাড়ি চাঁদপুরে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে আজ বৃহস্পতিবার তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান। চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে। অথচ এটি ছেড়েছে ৪ টা ১২ মিনিটে, প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে।
বিকেল ৪টার দিকে আমিরুল ইসলাম ট্রেনের একটি বগিতে দাঁড়িয়ে ১৭ মাস বয়সী ছেলে আরিফুল ইসলামকে বাতাস করছিলেন। তাঁর একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে ট্রেনের আসনে বসতে পেরেছেন স্ত্রী। আমিরুল ইসলাম আসন পাননি। ছেলেকে বাতাস করতে করতে এই বাবা বলেন, বগিতে ফ্যান নেই। গরমে ছেলেটা কাহিল হয়ে পড়েছে। ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লে এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
শুধু আমিরুল নয়, দেরিতে ট্রেন ছাড়ার কারণে তার মতো অনেক শিশুকেই ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেল। ট্রেনটির সব বগিতেই গাদাগাদি করে ঘরমুখী যাত্রীরা উঠেছিলেন।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরাফাত। তিনি চট্টগ্রামের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন নগরের ইপিজেড এলাকায়। তাঁর বাড়িও চাঁদপুর সদরে। আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ঝক্কিঝামেলা এড়াতে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্টেশনে এসে ভোগান্তি পোহাতে হলো।
স্টেশনে কথা হয় মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। তাঁর মেয়ের বয়স ৩ বছর। মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী সালমা হক বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছিলেন। কোনোভাবেই মেয়েকে ট্রেনের ভেতর রাখা যাচ্ছিল না। পরে কোলে নিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ফ্যানের নিচে।
চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনের প্রতিটি বগিই ছিল যাত্রীতে ঠাসা। আজ বিকেলে চারটায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে