অসুখী দাম্পত্য টিকিয়ে রাখবেন, নাকি বিচ্ছেদে যাবেন
Published: 4th, June 2025 GMT
মুনির-শামার বিয়ে পারিবারিকভাবে হয়েছিল। ছয় মাস না পেরোতেই শামা বুঝতে পারছিলেন, দুজনের ঠিক মিল হচ্ছে না। মতের অমিল, চিন্তাভাবনায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য আর দুই পরিবারের সংস্কৃতিতেও ফারাক—সব মিলিয়ে কিছুতেই দুজনের দিন ভালো যাচ্ছিল না। তবু ভাইদের সংসারে ফিরতে চাননি বলে আরও কিছুদিন সময় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভেবেছিলেন, সময়ের সঙ্গে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। নতুন সংসারে, নতুন পরিবারে মানিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টা তাঁর পক্ষ থেকে ছিল। সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশায় গর্ভধারণও করেন।
কিন্তু মানসিক চাপ, অব্যাহত যন্ত্রণায় একপর্যায়ে তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। এ ঘটনার পর সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। শেষমেশ ভাইদের বাড়িতেই ফিরে যান শামা। এই বিয়ে, সংসার, গর্ভপাত, মানসিক যন্ত্রণা তাঁর ওপর এমন প্রভাব ফেলে যে নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তিনি।
অফিসে কাজের ফাঁকে শামা বললেন, ‘শুরুতেই যদি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, তাহলে আমার মন বা শরীরের ওপর দিয়ে এত ধকল যেত না। আরও আগেই ক্যারিয়ার শুরু করতে পারতাম। নিজেকে আরও ভালোভাবে গুছিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু সমাজ বা পরিবারের কথা ভেবে বারবারই পিছিয়ে এসেছি, যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।’
বিয়ে কেবল দুটি মানুষের বন্ধন নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দুটি পরিবার, সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের দেশগুলোয় এখনো বিচ্ছেদকে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। তাই হাজারো অমিল, অসম্মান, প্রতারণা কিংবা ঝগড়ার পরও এখানে দম্পতিরা বৈবাহিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। সেই বিয়েতে যদি বিন্দু পরিমাণও ভালোবাসা বা শান্তি না থাকে, তাতেও তাঁরা বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চান না। কখনো তার কারণ সমাজ, কখনোবা সন্তান।
একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান তাসনিয়া ফারাজ। প্রেমের পর পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পরপরই সন্তানের মা হন। যদিও শুরু থেকেই নানান কারণে স্বামী শামসের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। কিন্তু নিজের পছন্দে এত ধুমধাম করে বিয়ের পর প্রেমিকের সঙ্গে মিলছে না, কথাটা কিছুতেই বাবা-মায়ের কাছে বলতে পারছিলেন না। আপাতদৃষ্টে সুখী পরিবার মনে হলেও তাঁরা দুজনেই বুঝছিলেন যে তাল কেটে গেছে।
আরও পড়ুনসম্পর্কে আগ্রহ হারিয়েছেন সঙ্গী, মুখে না বললেও যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪কেউই চায় না বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে, তবে পরিস্থিতি অনেক সময় সেই পথ বেছে নিতে বাধ্য করে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।