বিগত সরকারের আমলে রেল খাতে উন্নয়নের নামে বিপুল ব্যয়ে অহেতুক অনেক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেটি প্রকাশ পায়। দেড় বছর আগে উদ্বোধন হওয়া কক্সবাজার রেলস্টেশনে রাখা হয়েছে যাত্রীদের জন্য অনেক সুযোগ–সুবিধা, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেসবের কিছুই চালু করা হয়নি। যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পড়ে থেকে থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক জিনিসপত্র। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছয়তলার রেলস্টেশনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। মূল প্রকল্পে থাকলেও স্টেশনের এক ডজনের বেশি যাত্রী পরিষেবা চালু হয়নি। ছয়তলা ভবনের নিচতলায় তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী-সেতু, দ্বিতীয় তলায় শপিং মল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়—কিছুই চালু হয়নি। ঝিনুকের আদলে তৈরি ফোয়ারায় নেই পানির বিচ্ছুরণ, সেদিকের প্রবেশপথটিও বন্ধ।
উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, রাতের ট্রেনে পর্যটকেরা রেলস্টেশনে পৌঁছে লকারে লাগেজ কিংবা মালামাল রেখে সমুদ্রসৈকত, দর্শনীয় স্থানে ঘুরেফিরে রাতের ট্রেনে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবেন। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি। যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হলেও সেগুলো এখনো কেন ফেলে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। এতে যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন, দুর্ভোগেরও শিকার হচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, সরকার আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ায় স্টেশনটির ক্ষতিসাধনও হচ্ছে। ফলে দেশের প্রথম ও একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হলেও আদতে সেটি নামেই থেকে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, আইকনিক রেলস্টেশনের সব কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। রেলস্টেশন তৈরির পর এক বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমা থাকে। ভবনের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে তা ঠিক করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে তারা রেলস্টেশনটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।
দৈনিক ১০ জোড়া ট্রেন চলাচলের চাহিদাসম্পন্ন কক্সবাজারে এখন চলছে দুই জোড়া। মালবাহী ট্রেন চালু না হওয়ায় কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ, মাছ, পান–সুপারি এবং টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। তাতে সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন, সব ধরনের সুযোগ–সুবিধাসহ সত্যিকার অর্থে আইকনিক রেলস্টেশনটি চালু করা হবে কবে। আমরা আশা করব, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে রেলস্টেশনটি বুঝে নেওয়ার আগে প্রতিটি সুযোগ–সুবিধা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, তা যাচাই–বাছাই করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব অবহেলা গ্রহণযোগ্য হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট শনট
এছাড়াও পড়ুন:
‘বেস্ট হসপিটালিটি আইকন’ সম্মাননা পেলেন শাখাওয়াত হোসেন
প্রথমবার আয়োজিত আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ডসে ‘বেস্ট হসপিটালিটি আইকন’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। নিউইয়র্কের কুইন্সে গত ২৪ মে অনুষ্ঠানে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন জর্জিয়ার সিনেটর শেখ রহমান।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে রন্ধনশিল্প ও আতিথেয়তা শিল্পে উৎকর্ষের স্বীকৃতি প্রদানের এ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও উদ্ভাবকরা। খালিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ইউএসএ এবং আশা গ্রুপ ইউএসএ আয়োজিত আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ডস একটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চ, যা আতিথেয়তা ও রন্ধনশিল্পে অসাধারণ অবদানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। প্রথমবার ১৮টি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আতিথেয়তা শিল্পে তার অনন্য অদ্বিতীয় নেতৃত্ব, যুগান্তকারী অবদান ও রূপান্তরকারী প্রভাবের স্বীকৃতি এই সম্মাননা। বিশেষ করে, ফুড কস্ট অপ্টিমাইজেশনের ওপর তার উদ্ভাবনী কাজ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তার এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবের মুহূর্ত, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের আতিথেয়তা শিল্পের ক্রমবর্ধমান অবস্থানকে তুলে ধরে।
মো. শাখাওয়াত হোসেন এরই মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সম্মাননা হলো- যুক্তাজ্যের এশিয়ান ক্যাটারিং ফেডারেশন প্রদত্ত এশিয়ান কারি অ্যাওয়ার্ড ২০২১, সাউথ এশিয়ান ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এ ‘ট্যুরিজম ফেস অব সাউথ এশিয়া’ খেতাব, নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হোটেল ইন্ডাস্ট্রি আর্কিটেকচার, ইন্টেরিয়র অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের সেরা হোটেলিয়ার’ পুরস্কার। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শেফস ক্যুলিনারি কাপ কোরিয়া ২০২৪ ও ২০২৫-এর বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন একমাত্র বাংলাদেশি হোটেলিয়ার, যিনি এই শিল্পের একজন অভিজ্ঞ পেশাজীবী, শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি করছেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে পড়ান। তার প্রভাব শুধু করপোরেট ও একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, তিনি শেফস ফেডারেশন অব বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক ঢাকা চ্যাপ্টারের পরিচালক এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক পদসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।