২০২২ সালের মার্চে মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু খুন হন। ওই হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্তে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে সুমন সিকদার মুসার নাম উঠে আসে। টিপু খুনের নকশার পর মিশন সম্পন্ন করার ১২ দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান মুসা। সেখান থেকে চলে যান ওমানে। ঢাকার অপরাধজগতে তিনি ‘কিলার মুসা’ হিসেবে পরিচিত।

একসময় দুই কুখ্যাত সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুসা। টিপু হত্যার পর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানো হয়। এর পর থেকে কারাগারে ছিলেন। পুলিশ বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়ান মুসা। মিরপুর ও পল্লবীতে আতঙ্ক ছড়ান। গত ২০ জানুয়ারি পল্লবীতে মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে খুন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিহতের পরিবার বলছে, বাবু হত্যার মূল পরিকল্পকারী হলেন মুসা।

ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিদেশফেরত সন্ত্রাসী মুসাকে গ্রেপ্তার করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। গত সোমবার রাতে মিরপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাঁকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।

ডিবির মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর এলাকা থেকে বাবু হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় বাবু হত্যা মামলায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ মে মিরপুরে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মুসা জড়িত কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া কারাগার থেকে বের হয়ে অন্য কোনো অপরাধেও তিনি সম্পৃক্ত হয়েছেন কিনা, তাও তদন্ত চলছে।

২৭ মে প্রকাশ্যে মিরপুর ১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের গলিতে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে ব্যবসায়ী জাহিদুল হকের কাছ থেকে টাকাভর্তি ব্যাগ কেড়ে নেয় অস্ত্রধারীরা। লুট ব্যাগটিতে ৩ হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য দেশের মুদ্রা ছিল, যা বাংলাদেশি প্রায় ৩৫ লাখ টাকার সমান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো.

নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মিরপুরে ছিনতাই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

একটি মোটরসাইকেলে প্রথমে সন্দেহভাজন তিনজনকে দেখা গেছে। পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, জানুয়ারিতে নিহত বাবু পল্লবী এলাকার অন্ধকারজগতে ‘ব্লেড বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন। পল্লবীর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তিনি। পল্লবী এলাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন গ্রুপের সঙ্গে সন্ত্রাসী মুসা গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বাবু মামুন গ্রুপের সদস্য ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার, চুরি ও ছিনতাইয়ের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাবু খুন হন। এ ঘটনায় ২১ জানুয়ারি নিহতের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মিম পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন।

ঢাকার অপরাধজগৎ দীর্ঘদিন দাপাচ্ছেন মুসা। আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার সমন্বয়কারী হিসেবে আবার তাঁর নাম সামনে আসে। অভিযোগ আছে, ওই কিলিং মিশনে শুটার ভাড়া করে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহ করেন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে মতিঝিলে যুবলীগকর্মী রিজভী হাসান ওরফে ‘বোঁচা বাবু’ হত্যার সময়ও শুটার ভাড়ার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর ওপর। বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধজগতের তথ্য রাখেন– এমন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, টিপু হত্যা মিশনে মুসা ছাড়াও তাঁর আপন ভাই আবু সালেহ শিকদার জড়িত। বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে দুই ভাই অপরাধজগতে পা রাখেন। আশির দশকে মিরপুরে মুসার বাবা আবু সাইদ শিকদারকে হত্যা করা হয়। প্রায় দুই দশক পর মুসা ও তাঁর ভাই সালেহ ওই হত্যায় অভিযুক্ত খোকনকে খুন করেন। এর পর থেকে দুই ভাই পলাতক। তখনই অপরাধজগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। মুসার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে। তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা আছে আটটি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সন ত র স গ র প ত র কর র অপর ধ হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

টিপুকে হত্যায় ওমান থেকে ধরে আনা সেই মুসা নতুন আরেক হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে ব্লেড বাবু খুনের ঘটনায় সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সোমবার তাঁকে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার তাঁকে ব্লেড বাবু হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

পুলিশ বলছে, ঢাকার মতিঝিলের অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ খুন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। টিপুকে হত্যার পর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। ওই বছরেরই ৯ জুন পুলিশ তাঁকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৫ মাস পর গত ৩ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্লবীতে ব্লেড বাবুকে কুপিয়ে হত্যার নেতৃত্বে ছিলেন মুসা। তার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

ডিবির মিরপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সোনাহর আলী শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, মুসাকে গ্রেপ্তারের পর ব্লেড বাবু হত্যায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, পল্লবীতে খুন হওয়া মঞ্জুরুল ইসলাম অপরাধজগতে ‘ব্লেড বাবু’ নামে পরিচিত। তিনি পল্লবীতে আলোচিত শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামি। বাবু খুনের পেছনেও রয়েছে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ। পল্লবী এলাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন গ্রুপের সঙ্গে মুসা গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। খুনের শিকার বাবু ছিলেন মামুন গ্রুপের সদস্য। আধিপত্য বিস্তার ও অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের বাইরে থেকে মিরপুর অঞ্চলের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণকারীদের একজন হলেন মামুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টিপুকে হত্যায় ওমান থেকে ধরে আনা সেই মুসা নতুন আরেক হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার