বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার কাজ সম্পন্ন করেছে। এ বিষয়ে ইসি আর কোনো চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না। উচ্চ আদালতের এ–সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে আজ বুধবার বিকেলে ইসি এ কথা জানিয়েছে।

আজ বিকেলে নির্বাচন ভবনে ইসির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের ইসির সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের একটি নির্বাচনী দরখাস্ত এবং আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ, এটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের এ–সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপিল বিভাগ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং ‘সুপ্রিমেসি অন ইলেকশন ম্যাটারস’ আবারও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি মামলার রেফারেন্স দিয়েছেন আদালত। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বনাম নির্বাচন কমিশন এবং মাহমুদুল হক বনাম হেদায়েতুল্লাহ—এই ডিএলআরের রেফারেন্স। রেফারেন্সগুলোতে বলা আছে, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয় তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে, এটি সম্পন্ন হয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে।

ইসি যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, সেটা বাতিল করা হয়নি উল্লেখ করে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তাই ইসি মনে করে ইসি ইতিমধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলনে, ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাজ। শপথের বিষয়টি কারা করবে, তা স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশেন আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। তিনি জানান, ইসি স্থানীয় সরকারকে যে চিঠি দিয়েছিল সেখানে কোনো আইনি জটিলতা বা অন্য কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গেজেটের ‘কাভারিং লেটারে’ এটা দেওয়া হয়েছে।

ইসি এখন আপিল বিভাগ বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কোনো চিঠি দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ইসি আর কোনো চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না। কারণ, আপিল বিভাগ ইসির গেজেট বাতিল করেনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। শুনানি নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে ২২ মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মেয়র ঘোষণা ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ২৬ মে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। পরদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। গত বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ জ ট প রক শ আপ ল ব ভ গ র করপ র শ ইশর ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ