শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ হ্রাসের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম ও সদস্যসচিব রুস্তম আলী বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি না করে বরং হ্রাস করেছে। এটি দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।

মূলত ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এহেন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। নেতারা বলেছেন, ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের ফলাফল আজকের অন্তর্বর্তী সরকার, অথচ সেই সরকারই বিগত সরকারের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় হ্রাস করেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে সরকার আশঙ্কাজনকভাবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যয় হ্রাস করেছে। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে বিদায়ী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। দেশে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র কম থাকায় এই খাতের বড় অঙ্কের টাকা মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই সিদ্ধান্ত চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক গড়ে তোলার পথে অন্তরায়।

বিবৃতিতে মাহমুদ সেলিম ও রুস্তম আলী বলেন, ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ ও মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক সরকারগুলো সে দায়িত্ব কখনোই পালন করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা থাকলেও সরকার তা পূরণ না করায় বাজেট বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।

সরকার মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দের দাবি করলেও বাজেটের খাতগুলো অতি বিভাজন করে খাতওয়ারি শিক্ষা বাজেটকে বড় করে দেখানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। তা না হলে বিগত বাজেটে টাকার অঙ্ক বড় হওয়া সত্ত্বেও বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১১ শতাংশ। জাতীয় আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে সরকার শিক্ষা খাতকে যে অবহেলা করেছে, এই ব্যয় হ্রাস তারই প্রমাণ।

বিবৃতিতে দক্ষ, মানবিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দেশপ্রেমিক জাতিগোষ্ঠী গড়ে তুলতে অবিলম্বে শিক্ষা খাতে ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের জোর দাবি জানানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর দ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেট কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটটি কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে করি বাজেট জনবান্ধব এবং ব্যবসাবান্ধব। অনেকে বলেছেন আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে চট করে বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ একটা রাজস্ব আয় করে ফেলব, তা সম্ভব নয়।’

অর্থ উপদেষ্টা এ–ও বলেন, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেট যেহেতু ছোট হচ্ছে, তাই এর বাস্তবায়ন খুব কঠিন হবে না।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তা বিবেচনা করে দেখা হবে। বলছি না যে টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে ভালো কিছু করে ফেলেছি।’

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থ উপদেষ্টা। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ ছাড়া সবাই কথা বলেছেন।

বেলা তিনটায় শুরু এ সংবাদ সম্মেলনের প্রথম ৩০ মিনিট বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব, যা চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। অর্থ উপদেষ্টা সব প্রশ্নের জবাব নিজে না দিয়ে অন্য উপদেষ্টা, গভর্নর ও দুই সচিবকে জবাব দেওয়ার সুযোগ দেন। সাধারণত এ সংবাদ সম্মেলন দুই ঘণ্টা ধরে চললেও গতকাল দেড় ঘণ্টার মাথায় হঠাৎ তা শেষ করে দেওয়া হয়। ফলে অনেক সাংবাদিক প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি।

অর্থ উপদেষ্টা শুরুতেই বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন দেশ আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) ছিল, খাদের কিনারে চলে আসছিল, বিশেষ করে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। সে সময় আমরা যদি দায়িত্ব না নিতাম, তাহলে কী যে হতো...! সবাই মিলে দেশকে এখন একটা স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি।’

কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে বাজেট করেননি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি; ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের সমস্যা এবং রাজস্ব আদায়ের খারাপ পরিস্থিতি—এসব কিছুর মধ্যেই তাঁকে বাজেট করতে হয়েছে। সম্পদ সীমিত, চাহিদা অনেক বেশি। বাইরে থেকে সম্পদ আনা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, পুঁজিবাজারের অবস্থা, ব্যাংকের অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। এর ভেতরেই কাজ করতে হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, এত দিন যে প্রবৃদ্ধির বয়ান শোনা গেছে, তার সুবিধা কে পেয়েছে? সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ—এসব বিবেচনায় নিয়ে বাজেট সাজানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এত চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাজেট দিয়েছি, আমাদের প্রতি একটু সমবেদনা নিয়ে কাজ করুন। গুণগান আমরা চাই না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’ বিশ্বের প্রতিটা দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেটা আরও একটু সুসংহত করতে চাই। যদি আমরা নিজেরাই বলি খারাপ, তাহলে অন্যরা তো বলবেই।’

প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপ একেবারেই নেই, এ বক্তব্য মানতে নারাজ অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাজেটে নারীদের জন্য, স্টার্টআপের (নতুন উদ্যোগ) জন্য এবং যুবকদের জন্য তহবিল আছে। আরও খাতের জন্যও আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আগামী সরকারের জন্য

অন্তর্বর্তী সরকার চলে যাওয়ার পর যে সরকার আসবে, তার উদ্দেশে কথা বলেছেন তিন উপদেষ্টা। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সংস্কারগুলো আমরা হাতে নিয়েছি, সেগুলো চলমান। যতটুকু পারি করব। তবে আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যাব। আশা করছি, পরে যাঁরা আসবেন, তাঁরা বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবেন।’

উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরের সরকার চাইলেই প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে কৌশলগতভাবে বেছে নিতে পারবে। তারা অবকাঠামোকে প্রাধান্য দেবে, নাকি মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেবে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। এখন শুধু একটি ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের ধারাবাহিকতায় আগামী রাজনৈতিক সরকার যদি সংস্কারের পথে এগিয়ে যায়, তাহলে অগ্রগতি অনেক দূর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব। এবারের বাজেটে সরকারের বড় খরচের একটি অংশই যাচ্ছে ঋণ ও সুদ পরিশোধে। একসময় হয়তো জাতীয় সঞ্চয়ের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করতে পারব।’

আগের সরকারের জঞ্জাল পরিষ্কার

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্য হচ্ছে ঋণের চক্র থেকে বের হওয়া। আগের প্রকল্পগুলোর অব্যবস্থাপনা দূর করাও অন্যতম লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই আগের সরকারের নেওয়া। ১ হাজার ৩০০ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি নতুন। দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু কাটছাঁট করছি, বাদও দিচ্ছি। আগের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জঞ্জালগুলো পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। অনেক প্রকল্পে অর্থ সংস্থানও বিবেচনা করা হয়নি।’

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবমুখী এবং মিতব্যয়ী হয়েছে। ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের দুষ্টচক্র থেকে আমরা বের হতে চাই। তবে এক বাজেটে এটা হবে না।’

গতানুগতিক বাজেট, বড় পরিবর্তন নেই, চমক নেই—এসব বলা হচ্ছে। বৈষম্য কমানোর কী প্রতিফলন আছে, এমন প্রশ্নও উঠেছে। এসব কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করে এক বছর বা দেড় বছরের জন্য এসেছি। এই সময়ের মধ্যে চেষ্টা করা হয়েছে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার।’

গভর্নরের মতে মূল্যস্ফীতি বেশি কমবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাবাজার—এ দুই চ্যালেঞ্জ ছিল। মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিনিময় হারও স্থিতিশীল। ৭ থেকে ৮ মাস ধরে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে আছে। এটা একধরনের স্বস্তির বিষয়।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও গভর্নর বলেন, এটি আরও বেশি কমা উচিত। তিনি জানান, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের একটু বেশি এখন।

গভর্নর আশাবাদী যে এ হার আরও কমবে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। এদিকে বাড়ছে রপ্তানি সক্ষমতা। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করে রেখেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাজেটে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কমে আসবে মূল্যস্ফীতি।

চাঁদাবাজি কমানোর চেষ্টা

এবারের বাজেটকে অপচয় ও অসংগতি কমানোর বাজেট বলে অভিহিত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, চেষ্টা চলছে চাঁদাবাজি সীমিত করার। সড়ক বিভাগ থেকে চাঁদাবাজি সীমিত করতে পুলিশের সঙ্গে কাজ চলছে। যাঁরা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন, তাঁদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে শোনার পরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেশি ভাড়া নেওয়ার কারণে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে একটি বাসের মালিকপক্ষকে।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতেই এবার বিদ্যুৎ ও এলপিজির দাম কমানো হয়েছে। কমানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দামও। এতে গাড়ি ভাড়া কমবে।

পাচার অর্থ ফেরত সহজ না

অর্থ পাচারকারীরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সহজ নয়। কারণ, পাচারকারীরা বিভিন্ন স্তর (লেয়ারিং) করে অর্থ পাচার করেন। অর্থ ফেরত আনতে সময় লাগবে। এ কাজে নাইজেরিয়ার লেগেছে ২০ বছর। গভর্নরের নেতৃত্বে এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে পারলে বাজেট সহায়তা কম লাগত, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) কাছেও যেতে হতো না। দুর্ভাগ্যবশত তা পারা যায়নি।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা কালোটাকা না, অপ্রদর্শিত আয়। শুধু ফ্ল্যাট বা জমি কেনার ব্যাপারে একটা বিধান দেওয়া হয়েছে। এর দুটি দিক আছে। একটা নৈতিক, আরেকটা বাস্তব অর্থাৎ কর পাওয়া যাবে কি না।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালোটাকা সাদা করার জন্য আগের মতো কোনো বিশেষ সুযোগ নেই। তবে দুটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করে ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর একটি হলো কেউ নিজের জমিতে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে যদি বাড়ি তৈরি করেন, তাহলে দ্বিগুণ কর দিয়ে তা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না, বিষয়টা তা নয়। দ্বিতীয় সুযোগটি হলো ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে কর পাঁচ গুণ করে দেওয়া হয়েছে।

বাজারে স্বস্তি, কৃষক দাম পাচ্ছেন না

কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভোক্তারা অল্প দামে আলু পাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে যত কথা বলা হয়, কৃষকের অধিকার নিয়ে তা হয় না। গতবারের চেয়ে এবার সব ফসলেরই উৎপাদন ভালো হয়েছে। হিমাগারগুলো আলুতে ভরে গেছে। আদা, পেঁয়াজ, ভুট্টারও বাম্পার উৎপাদন হয়েছে।

শীত ও গ্রীষ্মের এক মাস ব্যবধানে কৃষকের সবজি নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, নতুন হিমাগার করা হচ্ছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আগে রাজস্বনীতি প্রণয়ন হতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেনদরবারের মাধ্যমে। ফলে বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া হতো। এবারের বাজেটে রাজস্বনীতি কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য করা হয়নি। এটাই একটা গুণগত পরিবর্তন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আগের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন যে মার্চ বা এপ্রিলে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এতেই প্রমাণিত হয় অর্থনীতি তখন খাদের কিনারায় ছিল। সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১১ মাসে ২৮ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়
  • ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকা দুঃখজনক: গণসংহতি আন্দোলন
  • জুনের প্রথম ৩ দিনে দেশে এসেছে ৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • বাজেট অনুমোদন হবে ২২ জুন
  • ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ বাড়বে: আইসিএবি
  • নতুন বিনিয়োগ চিন্তা পরের কথা, বিদ্যমান ব্যবসা নিয়েই দুশ্চিন্তা
  • সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের পরিকল্পনা
  • বাজেট কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে