বাবার লাশ দাফন করেই আরিফুলকে কোরবানির পশুর হাটে আসতে হলো কেন
Published: 5th, June 2025 GMT
কোহিনূর শেখ ছিলেন গরুর সঙ্গে ট্রাকের পেছনে। আর ছেলে আরিফুলকে বসিয়ে দিয়েছিলেন চালকের পাশে। কথা ছিল, ঢাকার বছিলা গরুর হাটে বাবা গরু বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবেন। আর আরিফুল যাবে বিমানবন্দরে। বিদেশ থেকে খালা আসছেন, তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সঙ্গে নতুন জামাকাপড়ও নিয়েছিল সে।
কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সব হিসাব পাল্টে দিল। টাঙ্গাইলে ট্রাক দুর্ঘটনায় বাবা ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন। সঙ্গে থাকা ব্যবসায়ীদের হাতে গরু রেখে বাবার লাশ নিয়ে রাজশাহী ফিরে যায় আরিফুল। লাশ দাফন করে, নতুন জামাকাপড় রেখে পরদিন আবার ঢাকায় ছুটতে হয় তাকে। গরুগুলো যে বিক্রি করতে হবে!
৪ জুন সকালে বছিলা হাটে আরিফুলকে দেখা যায়। গরুর গলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে বাবা নেই। তার দিশাহারা চোখ দুটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, নবম শ্রেণির ছাত্রটির কাঁধে হঠাৎই পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়েছে।
‘যমুনা সেতু পার হয়েছি, মা’কোহিনূর শেখের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। নদীভাঙনে নিঃস্ব কোহিনূর নিবন্ধিত জেলে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরে, কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। ১০ থেকে ১৫ বছর হলো প্রতি কোরবানির ঈদে হাটে তোলার জন্য তিন–চারটি করে গরু পালতেন। এবার তাঁর গরু ছিল তিনটি।
কোহিনূরের ভাগনে রেজাউল করিম জানালেন, প্রবাসী এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে গরু পালতেন কোহিনূর। হাটে গরু বিক্রি করে টাকা ফেরত দিতেন। রেজাউল বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা দেন না। কখনো এসে বলেন, লোকসান হয়েছে। ঠিকমতো টাকা দিতে চান না। আবার ব্যাপারী প্রভাবশালী হলে টাকা তুলতে সালিস–দরবারও করতে হয়। এই অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে সরাসরি ঢাকায় যান। নগদ টাকায় বিক্রি করে আবার ফিরে আসেন।’
বাবার লাশ দাফন করে, পরদিন আবার ঢাকায় ছুট আসতে হয়েছে আরিফুলকে, গরুগুলো যে বিক্রি করতে হবে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ফ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক