কোহিনূর শেখ ছিলেন গরুর সঙ্গে ট্রাকের পেছনে। আর ছেলে আরিফুলকে বসিয়ে দিয়েছিলেন চালকের পাশে। কথা ছিল, ঢাকার বছিলা গরুর হাটে বাবা গরু বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবেন। আর আরিফুল যাবে বিমানবন্দরে। বিদেশ থেকে খালা আসছেন, তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সঙ্গে নতুন জামাকাপড়ও নিয়েছিল সে।

কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সব হিসাব পাল্টে দিল। টাঙ্গাইলে ট্রাক দুর্ঘটনায় বাবা ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন। সঙ্গে থাকা ব্যবসায়ীদের হাতে গরু রেখে বাবার লাশ নিয়ে রাজশাহী ফিরে যায় আরিফুল। লাশ দাফন করে, নতুন জামাকাপড় রেখে পরদিন আবার ঢাকায় ছুটতে হয় তাকে। গরুগুলো যে বিক্রি করতে হবে!

৪ জুন সকালে বছিলা হাটে আরিফুলকে দেখা যায়। গরুর গলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে বাবা নেই। তার দিশাহারা চোখ দুটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, নবম শ্রেণির ছাত্রটির কাঁধে হঠাৎই পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়েছে।

‘যমুনা সেতু পার হয়েছি, মা’

কোহিনূর শেখের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। নদীভাঙনে নিঃস্ব কোহিনূর নিবন্ধিত জেলে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরে, কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। ১০ থেকে ১৫ বছর হলো প্রতি কোরবানির ঈদে হাটে তোলার জন্য তিন–চারটি করে গরু পালতেন। এবার তাঁর গরু ছিল তিনটি।

কোহিনূরের ভাগনে রেজাউল করিম জানালেন, প্রবাসী এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে গরু পালতেন কোহিনূর। হাটে গরু বিক্রি করে টাকা ফেরত দিতেন। রেজাউল বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা দেন না। কখনো এসে বলেন, লোকসান হয়েছে। ঠিকমতো টাকা দিতে চান না। আবার ব্যাপারী প্রভাবশালী হলে টাকা তুলতে সালিস–দরবারও করতে হয়। এই অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে সরাসরি ঢাকায় যান। নগদ টাকায় বিক্রি করে আবার ফিরে আসেন।’

বাবার লাশ দাফন করে, পরদিন আবার ঢাকায় ছুট আসতে হয়েছে আরিফুলকে, গরুগুলো যে বিক্রি করতে হবে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তামিমের হুঁশিয়ারি, ‘কখনো আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না’

নতুন করে আবার আলোচনায় ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব‌্যর্থতার সফর। এই আলোচনায় আসার বড় কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাইরে বেরিয়ে আসা। 

সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব‌্যর্থতার পর বিসিবি এনায়েত হোসেন সিরাজকে প্রধান করে মাহমুব আনাম ও আকরাম খানকে সদস‌্য করে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ তদন্ত কমিটি ১৬ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। যেখানে সাকিব, তামিম, জালাল ইউনুসসহ কোচ, ফিজিও, ক্রিকেটাররা ছিলেন। ব্যর্থতার কারণ খোঁজার সঙ্গে বহুল আলোচিত হাথুরুসিংহে-নাসুমের চড় কাণ্ড-ও তদন্তে উঠে আসে।

সাকিবের একটি অভিযোগ নিয়ে হচ্ছে প্রবল আলোচনা। সাকিব তদন্ত কমিটিকে অভিযোগ করেন, ‘‘ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান (জালাল ইউনুস) এবং তামিম ইকবাল নাসুমকে 'চড় মারার' অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোন করেছিলেন এবং প্রধান কোচের বিরুদ্ধে এটি মিডিয়াতে ফাঁস করেছিলেন যাতে তাকে বরখাস্ত করা যায়।’’

আরো পড়ুন:

তামিম ও জালাল ইউনুসের বিরুদ্ধে হাথুরুসিংহেকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ সাকিবের

সাকিবের সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক ‘শেষ নয়’

সাকিবের এমন অভিযোগ শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ হিসেবেই মূল‌্যায়ন হয়েছে। পরবর্তীতে এর কোনো সতত‌্যা তারা পায়নি। এজন‌্য তাদের প্রতিবেদনে এরকম কিছু উঠে আসেনি। কিন্তু সাকিবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জায়গায় তামিমকে দোষারোপ করা হচ্ছে। যা মোটেও ভালোভাবে নেননি তামিম। এজন‌্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন তামিম।    

তামিম লিখেছেন, ‘‘আমি আপনাদের সঙ্গে কখনো হাত মেলাব না! যারা আমার পেছনে লেগেছেন, আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন আমাকে হাত করার জন্য, সেই মানুষগুলোকে বলছি, আমি কখনও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।’’

“আমি যদি কখনো ক্রিকেট প্রশাসনে আসি, সঠিক পথ ধরেই আসব এবং শুধুমাত্র ক্রিকেটের ভালোর জন্য আসব। প্রয়োজন হলে কখনো ক্রিকেট বোর্ডে আসব না, তবুও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।”
সাকিবের অভিযোগ নিয়ে তামিমের কোনো মন্তব্য নেই। স্রেফ বললেন, ‘‘যারা আমার ভক্ত-সমর্থক ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, তাদের জন্য বলছি, কোনো একজন ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্তে রিপোর্টে অভিযুক্ত হওয়া, দুটির মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ধারণার কথা বলেছেন তদন্ত কমিটিতে। সেটা তার ব্যাপার।’’

তামিমকে ডেকেছিল তদন্ত কমিটি। তবে সেই সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে-নাসুমের চড় সংক্রান্ত কোনো বিষয় এবং তথ্য ফাঁসের বিষয়টি উঠে আসেনি, ‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়নি এবং তথ্য ফাঁস করা সংক্রান্ত কোনো কিছু তারা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেননি। আমি তো তখন দলেই ছিলাম না! তদন্ত কমিটির কাছেও এটা মনে হলে নিশ্চয়ই তারা একবার হলেও সেই প্রসঙ্গ তুলতেন বা জিজ্ঞাসা করতেন! স্বচ্ছতার স্বার্থেই তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার আলোচনার পুরোটাই রেকর্ড করা আছে, তাদের অনুমতি নিয়েই।’’ 

হুট করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এই সময়ে সামনে আসায় তামিমের শঙ্কা ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে, ‘‘কোনো এক ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্ত কমিটির অভিযোগের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান আছে, আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন। এই ব্যাপারটিকে যারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে, তাদেরকে আবারো বলছি, আমাকে কোনোভাবেই আপনাদের কাতারে পাবেন না। আমি হাত মেলাব না।”

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ