মাংস কাটার ছুরি, চাপাতি, খাটিয়া, হোগলা পাতার পাটি–এসব উপকরণ ছাড়া কোরবানির ঈদ চিন্তাই করা যায় না। তাই, ঈদুল আজহা এলেই এসব উপকরণের চাহিদা বেড়ে যায়। কেউ কেউ বছরব্যাপী এগুলোর ব্যবসা করলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীর সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়।

এমনই একজন ব্যবসায়ী হলেন হোসেন আলী। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বীরকুৎসা গ্রামের এই বাসিন্দার বয়স প্রায় ৬০ বছর। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে অনেক হাটে ঘুরে ঘুরে খাটিয়া বিক্রি করেছেন। তিনি মূলত কাঠ ব্যবসায়ী। তবে ঈদুল আজহা এলে খাটিয়ার পাশাপাশি পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর ছুরিও বিক্রি করেন।

হোসেন আলী এ বছর বসেছেন বাগমারার যোগীপাড়া ইউনিয়নের ভাগনদী হাটে। গত বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তেঁতুল কাঠের খাটিয়া বিক্রি করছেন তিনি। একেকটির দাম ৬০০ টাকা। অন্য খাটিয়া থেকে তাঁর খাটিয়ার দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতা আছে ভালোই।

আলাপকালে হোসেন আলী জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি উপজেলার হামিরকুৎসা, তালঘোড়ীয়া, নখপাড়া ও বীরকুৎসাসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে খাটিয়া ব্যবসা করছেন। কোনো দরদাম করেন না। সামান্য লাভ রেখে দাম নির্ধারণ করেন। ফলে বিক্রিও ভালো। 

খাটিয়া তৈরির জন্য ৬ ফিটের মোটা একটি গুল (গাছের আংশ) পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় কেনেন হোসেন আলী। প্রতিটি গুল থেকে ১২ থেকে ১৪টি খাটিয়া তৈরি হয়। খাটিয়া প্রতি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা খরচ পড়ে। প্রতিটি খাটিয়া বিক্রি করেন ৬০০ টাকা। জানালেন, খাটিয়া তৈরি ছাড়াও অন্য কিছু খরচও আছে। যেমন: অস্থায়ীভাবে বসলেও হাট ইজারদারকে প্রতিদিন ২০০ টাকা দিতে হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে তার লাভ থাকছে তিন থেকে চার হাজার টাকা।

হোসেন আলী ছাড়াও এই হাটে জুয়েল রানা (৩৪) ও আকরাম হোসেন (৩৮) নামের আরও দু’জন খাটিয়া বিক্রি করছেন। তাদের কাছে তেঁতুল গাছের খাটিয়া ছাড়াও কড়ই ও মেহগনি কাঠের খাটিয়া রয়েছে। জুয়েল বলেন, করই ও মেহগনি কাঠের চেয়ে তেঁতুল কাঠ বেশি শক্ত, তাই এর দাম কড়ই ও মেহগনির চেয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেশি। তবে দাম বেশি হলেও খাটিয়া হিসেবে তেঁতুল কাঠই ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। খাটিয়ার পাশাপাশি পশুর খাবার হিসেবে ভুট্টা ও গমের ভুসিও বিক্রি করেন জুয়েল।

জিয়াউর রহমান পেশায় কসাই। টাকার বিনিময়ে ঈদের দিন কোরবানির গরু-ছাগলের মাংস কাটার কাজ করেন। তাই খাটিয়া কিনতে এসেছেন। জানালেন, এ বছর খাটিয়ার দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। তবে কোরবানির ঈদে তাঁর ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। ফলে খাটিয়ার দাম নিয়ে তেমন একটা ভাবছেন না।

পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমানও খাটিয়া কিনতে এসেছেন। তিনি বললেন, হোসেন আলীর খাটিয়ার মান ভালো। তাই অনেকেই তাঁর কাছ থেকে খাটিয়া কেনেন। একই কথা জানালেন কলেজশিক্ষক সাহাবুল ইসলাম। তিনিও হোসেন আলীর তৈরি তেঁতুল কাঠের খাটিয়া কিনেছেন।

কোরবানির ঈদে আরও একটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তা হলো কাঁঠাল পাতা। ভাগনদী হাটের গেটের সাথেই রাস্তার ওপর ভ্যানে করে কাঁঠাল পাতা নিয়ে বসেছেন ইদ্রিস আলী (৫৫)। তিনি গত তিন-চার দিন ধরে কাঁঠাল পাতা বিক্রি করছেন। একেকটি আঁটি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানালেন, এতে তার প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা লাভ থাকছে।

হাটে কাঁঠাল পাতা ছাড়াও কলাপাতা ও ধানের খড়ের আঁটি বিক্রি করেন অনেকে। এ বিষয়ে ভাগনদী হাট ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদে কোরবানির পশু কেনাবেচার পাশাপাশি এর খাবার, জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর ছুরি এবং খাটিয়াসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেনাবেচা হয়। সব মিলে নানা পেশার মানুষের সম্মিলন ঘটে এই ঈদ ঘিরে, যা ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন র হ স ন আল ব যবস করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ

শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার বিশাকুড়ি এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে ওই তরুণের বাসা থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির (১৯) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার তিনি শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ জানায়, আফতাব উদ্দিনের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা রয়েছে ও নাশকতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়ির সামনের সড়ক থেকে আটক করা হয়। এরপর ঢাকা থেকে রাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ডামুড্যায় আসে। তারা আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়।

পরের দিন রোববার ডামুড্যা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন বাদী হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আফতাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই তরুণ অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত থেকে জঙ্গিবাদে স্বেচ্ছায় উদ্বুদ্ধ (সেলফ মোটিভেটেড) হওয়ার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে কিছু একটা করবে, এমন চেষ্টা করছিল। তার আগেই আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তবে আইএসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তার দিকে (আইএস) সে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন বলেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’

ডামুড্যা থানা সূত্র জানায়, ডামুড্যা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাকুড়ি এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন। তিনি ডামুড্যা উপজেলা সদরের পূর্ব ডামুড্যা সরকারি কলেজ থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল মালেক হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে আফতাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাব উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তাঁর বাড়ি তল্লাশি করলে বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন, তা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে বলা যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
  • ১০ তলা ভবন নির্মাণে খরচ কত