ঘাট ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল চিলমারী-রৌমারী নৌপথের ফেরি চলাচল
Published: 5th, June 2025 GMT
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে ঘাট ডুবে যাওয়ায় চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নাব্যতা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। এরপর গত ২২ মে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লে আবার ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। ১২ দিন পর গতকাল বুধবার থেকে আবারও ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল নামের দুটি ফেরি নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রাকসহ যাত্রী পারাপার করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চিলমারী নদীবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে পন্টুনের সঙ্গে সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। ফলে ভারী ট্রাক ও যানবাহন পন্টুনে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। একই চিত্র রৌমারী উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় বলে বিআইডব্লিউটিএ নিশ্চিত করেছে। যাত্রীরা নৌকা ভাড়া করে পারাপার হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিআইডব্লিউটিএর সদিচ্ছা থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার আগেই সংযোগ সড়কের মাটি কেটে উঁচু করে নিতে পারত। এতে পানির স্তর বাড়লেও ফেরি চলাচল বন্ধ হতো না।
রৌমারী থেকে চিলমারী আসা যাত্রী রায়হান আলী জানান, রৌমারী থেকে চিলমারী ঘাটের নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা হলেও ঈদযাত্রায় ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ফেরি চালু থাকলে অনেক যাত্রী পারাপার হতেন। এতে নৌকামালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে যেত। নৌকাচালক ও ঘাট ইজারাদার মিলে সিন্ডিকেট করে ফেরি বন্ধ করে থাকতে পারেন বলেও তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিএর উপসহকারী প্রকৌশলী মো.
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিলমারী-রৌমারী নদীপথে শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকলে একটি ঘাট ও বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর বেড়ে গেলে ব্যবহারের জন্য আরেকটি ঘাট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি। পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে ঘাট উপযোগী করতে তিন থেকে সাত দিন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ