কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে ঘাট ডুবে যাওয়ায় চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নাব্যতা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। এরপর গত ২২ মে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লে আবার ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। ১২ দিন পর গতকাল বুধবার থেকে আবারও ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল নামের দুটি ফেরি নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রাকসহ যাত্রী পারাপার করছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে চিলমারী নদীবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে পন্টুনের সঙ্গে সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। ফলে ভারী ট্রাক ও যানবাহন পন্টুনে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। একই চিত্র রৌমারী উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় বলে বিআইডব্লিউটিএ নিশ্চিত করেছে। যাত্রীরা নৌকা ভাড়া করে পারাপার হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিআইডব্লিউটিএর সদিচ্ছা থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার আগেই সংযোগ সড়কের মাটি কেটে উঁচু করে নিতে পারত। এতে পানির স্তর বাড়লেও ফেরি চলাচল বন্ধ হতো না।

রৌমারী থেকে চিলমারী আসা যাত্রী রায়হান আলী জানান, রৌমারী থেকে চিলমারী ঘাটের নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা হলেও ঈদযাত্রায় ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ফেরি চালু থাকলে অনেক যাত্রী পারাপার হতেন। এতে নৌকামালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে যেত। নৌকাচালক ও ঘাট ইজারাদার মিলে সিন্ডিকেট করে ফেরি বন্ধ করে থাকতে পারেন বলেও তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিএর উপসহকারী প্রকৌশলী মো.

কামরুজ্জামান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে ঘাট ডুবে গিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঘাটের দায়িত্ব তাঁদের নয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিলমারী-রৌমারী নদীপথে শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকলে একটি ঘাট ও বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর বেড়ে গেলে ব্যবহারের জন্য আরেকটি ঘাট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি। পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে ঘাট উপযোগী করতে তিন থেকে সাত দিন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট