অ্যান্টার্কটিকার পর্বতমালার রহস্য উন্মোচন
Published: 7th, June 2025 GMT
৫০ কোটি বছর ধরে লুকানো এক পর্বতের রহস্য উন্মোচন করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই বরফাচ্ছন্ন অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের রহস্যের শেষ নেই। সেই অ্যান্টার্কটিকার বরফের গভীরে থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালার বৈচিত্র্য খোঁজার কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
পুরোনো পৃথিবীর বরফ সংরক্ষিত আছে, এমন পর্বত বলয়ের একটি অ্যান্টার্কটিকাতে আছে। বরফের নিচের থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালা সাধারণভাবে ইউরোপীয় আল্পসের মতো। বিজ্ঞানীরা বরফের কয়েক কিলোমিটার নিচে গাম্বুরতসেভ উপহিমবাহনির্ভর পর্বতমালা সনাক্ত করেছেন। পর্বতমালা কয়েক কিলোমিটার বরফের নিচে অবস্থিত। ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে এই পর্বতমালা। ১৯৫৮ সালে একটি অভিযানের সময় ভূমিকম্প কৌশল ব্যবহার করে এই পবর্তমালার তথ্য প্রথম জানা যায়। ৫০ কোটি বছর ধরে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে এই পর্বতমালা।
বরফের নিচের লুকিয়ে থাকা গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা পূর্ব অ্যান্টার্কটিক বরফের সর্বোচ্চ বিন্দুর নিচে চাপা পড়ে আছে। যেখানে বেশির ভাগ পর্বতশ্রেণি ক্ষয় বা টেকটোনিক ঘটনার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়, সেখানে গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা বরফের গভীর স্তরে বহু বছর ধরে সংরক্ষিত আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত পর্বত বলয় বলা হচ্ছে এই পবর্তমালাকে।
দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে পর্বতমালা তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব কাঠামো পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের পর হিমালয় পবর্তমালা তৈরি হয়। হিমালয় পর্বতশ্রেণির এখনো উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা এত দিন ধরে কীভাবে স্থিতিশীল আছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা।
আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটারস জার্নালে অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা সুপার মহাদেশ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়। তখন থেকে অ্যান্টার্কটিকার পর্বতশ্রেণি বিকাশ লাভ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই সংঘর্ষের ফলে পাহাড়ের নিচে গরম ও আংশিকভাবে গলিত শিলার প্রবাহ শুরু হয়েছিল। পর্বত আকার ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বক ঘন হয়ে ওঠে। অনেক সময় পবর্তের নিজস্ব ওজনের কারণে ভেঙে পড়ে পর্বতকাঠামো।
বিজ্ঞানী জেফ বেনোভিটজ বলেন, অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর অ্যান্টার্কটিকার ভূতত্ত্বকে ঢেকে রেখেছে। ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিকা বেসমেন্ট শিলা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বরফের নিচের ভূপ্রকৃতির বিকাশ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রদান করতে পারে। প্রাচীন সময়ের ল্যান্ডস্কেপ কেমন ছিল, তা জানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। গবেষকেরা পবর্তের তথ্য আহরণের জন্য জিরকন নামের খনিজের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই খনিজ ভূতাত্ত্বিক স্টপওয়াচের মতো কাজ করে। এই ক্ষুদ্র স্ফটিক কোটি কোটি বছর ধরে টিকে থাকতে পারে। জিরকনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম ধারণ করতে পারে। ইউরোনিয়ামের ক্ষয় থেকে বিজ্ঞানীরা নির্ভুলতার সঙ্গে বয়স নির্ধারণ করতে পারে। এসব খনিজের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫৮ কোটি বছর আগে পর্বতশৃঙ্গ তৈরি হয়। আর ৫০ কোটি বছর আগে সেখানে কাঠামোগত পতনের শুরু হয়েছিল।
বরফের মধ্য দিয়ে খনন করে শিলার নমুনা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। সেখানে খনিজের উপস্থিতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও তথ্য সংগ্রহ করতে নতুন মডেল নিয়ে কাজ করছেন।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরফ র ন চ স রক ষ ত স ঘর ষ ক জ কর ৫০ ক ট র বরফ করছ ন পবর ত
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।