ঈদের বিকেলের আলো নিভে আসছে। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলোয় ধীরে ধীরে নেমে আসছে ছুটির নিস্তব্ধতা। কিন্তু মিরপুর, শনির আখড়া মালিবাগ রেলগেট, জুরাইন, খিলগাঁও কিংবা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এসব জায়গায় তখনও জমজমাট এক ভিন্ন রকমের বাজার। না, এটা গরু বা ছাগলের হাট নয় এ হলো কোরবানির ‘মাংসের হাট’।
শনিবার (৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।
পলিথিন ব্যাগে ভরা কাটা মাংস রাখা ফুটপাতে। কেজিতে দাম মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। অথচ ঠিক সকালেই রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কোরবানির মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে।
আরো পড়ুন:
ফাঁকা ঢাকা
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে এনসিপির ৩ দিনের কর্মসূচি
ফ্রিজ নেই, বাড়ি দূরে, বিক্রি করছি
মিরপুর শাহ আলী ফুটপাতে বসে মাংস বিক্রি করছেন মৌসুমী কসাই সোবাহান আলী। হাতে লেগে আছে মাংস কাটার দাগ। বললেন, “ঈদের সময় কয়েকটা গরু কাটছি, মালিকরা মাংস দিয়েছে। নিজের আর সহকারীদের অংশ মিলিয়ে যা হয়েছে, তা বিক্রি করছি। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা, মাংস নিয়ে যাওয়া সম্ভব না, আবার ফ্রিজও নেই। মাংস ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দাম চাই। প্রতি কেজি মাংস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় (মানভেদে) বিক্রি করি।”
মাংস বিক্রি করে টিকে থাকার লড়াই
শনির আখড়া ব্রিজে দেখা গেল, রহিমা নামে এক বৃদ্ধা পলিথিনের ব্যাগ খুলে মাংস সাজিয়ে রেখেছেন। প্রশ্ন করতেই বললেন, “বিভিন্ন বাসা থেকে মাংস পেয়েছি। এত মাংস রাখার ব্যবস্থা নেই, রান্নার গ্যাসও নেই। তাই বিক্রি করছি, টাকাটা দরকার।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক সুলতান বলেন, “অনেক বাসায় গিয়ে মাংস এনেছি। কিন্তু এত মাংস রাখা যাবে না। বিক্রি করে কিছু চাল-তেল কিনব।”
লজ্জার দেয়াল ভাঙছে
মাংস কিনতে আসা মধ্যবয়সী শেফালি নামের একজন নারী বলেন, “চাওয়া লজ্জার, অনেকে দেয়ও না। কিন্তু বাচ্চাদের তো মুখ আছে, তাই এখান থেকে কিনে নিচ্ছি। দুই কেজি ৬০০ টাকায় নিয়েছি।”
এসব ফুটপাতের হাট যেন পরিণত হয়েছে এক সম্মানজনক দানের বাজারে। যেখানে কেউ দিচ্ছে নিজেদের উপায় না থাকায়, আবার কেউ নিচ্ছে নিজেদের মান-সম্মান রেখে।
জীবাণু, গন্ধ আর ঝুঁকির
ঢাকার জুন মাসের গরমে দিনের তাপমাত্রা থাকে ৩২–৩৪ ডিগ্রির আশেপাশে। খোলা রাস্তায় রাখা মাংস ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজুর রহমান বলেন,“দানের মাংস বিক্রি করা কেউ-ই গর্বের সঙ্গে করে না। কিন্তু বাস্তবতা এমন, যেখানে দানের জায়গা দখল নিচ্ছে টাকার হিসাব। আয়-ব্যয়ের অসমতা যেভাবে বেড়েছে, তাতে গরিব মানুষের জন্য কোরবানির মাংসও এখন এক আর্থিক উপাদান।”
তিনি আরো বলেন, “শহরের দান কাঠামো পুরনো হয়ে গেছে। এককালীন দেওয়ার বদলে যদি সংগঠিত সহায়তা হয় যেমন রান্না করা খাবার বা কুপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হাটে কেনার সুযোগ তাহলে এর সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে।”
সেগুনবাগিচা বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ কলিমুল্লাহ বলেন, “ইসলাম ধর্মে কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য আত্মত্যাগ ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো। সাধারণত মাংস তিনভাগ করে আত্মীয়, প্রতিবেশী ও দরিদ্রের মধ্যে বিলি করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, সেই মাংসই এখন অর্থনৈতিক মূল্যে রূপ নিচ্ছে।এ যেন এক আর্থসামাজিক ট্র্যাজেডি যেখানে দানের পবিত্রতা, অভাবের কষ্ট এবং লজ্জার সীমারেখা এক হয়ে তৈরি করছে নগরজীবনের এক নতুন প্রতিচ্ছবি।”
রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, “এই অস্থায়ী মাংসের হাট শুধুই অর্থনৈতিক চিত্র নয়, এটি নগর দরিদ্রের খাদ্য, আত্মসম্মান ও বেঁচে থাকার এক চিত্রকল্প।”
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট ক রব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।