রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবসায় আরও মনোযোগ দেবেন ইলন মাস্ক—এমন আশায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে সেই আশায় গুড়ে বালি। এখন উল্টো ফেডারেল সরকারের অন্যতম বড় ঠিকাদার হয়েও মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে।

ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপ দাগার পর গত বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম পড়ে যায় ১৪ শতাংশ। যদিও গতকাল শুক্রবার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়; বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মাস্কের ‘ফোনে কম সময় দিয়ে অফিসে বেশি সময়’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কার্যত কাজে আসছে না। মোদ্দাকথা হলো, ইলন মাস্ক রাজনীতি থেকে সরে এলেই তাঁর ব্যবসা আবার তরতর করে বাড়বে, বাস্তবতা অতটা সহজ হবে না। সেই সঙ্গে মাস্কের অন্যতম বৃহৎ খদ্দের মার্কিন সরকারও ভর্তুকি বন্ধের হুমকি দিয়েছে।

বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গারবার কাওয়াসাকির প্রধান রস গারবার বলেন, ‘আপনি যদি ভাবেন, প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা আপনার, তাহলে সেটা নিছকই বোকামি।’ তিনি আরওে বলেন, মাস্ক রাজনীতিমুখী হওয়ার পর থেকেই তিনি ধাপে ধাপে টেসলায় বিনিয়োগ কমিয়ে আনছেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনাকে তিনি বলেছেন ‘ভীষণ বেদনার দিন’। মাস্ক সম্পর্কে তাঁর অভিমত, তিনি যখন কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করেন, তখন তাঁর শক্তির সীমা–পরিসীমা নেই। তিনি বিশ্বের কাছে প্রমাণ রেখেছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তি যখন কারও কাছে ছিল না, তখন তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। এরপর তিনি রকেট বানিয়েও দেখিয়েছেন, তিনি পারেন।

এখন বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্প নিজের ব্যবসার গতি ঘুরিয়ে ফেলতে পারবেন কি না, সেটা বড় প্রশ্ন নয়; বরং তিনি ব্যবসার গতিমুখ ঘুরিয়ে ফেলতে চান কি না, সেটাই প্রশ্ন।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাংবাদিক কারা সুইশারের মনোভাব আরও কঠোর। সান ফ্রান্সিসকোর এক সম্মেলনে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘টেসলা একসময় দারুণ বিষয় ছিল, কিন্তু এখন তারা অনেক পেছনে। স্বচালিত ট্যাক্সির দৌড়ে তারা গুগলের ওয়েমোর কাছেও নেই; যদিও সম্ভাবনা ছিল, টেসলা এ ক্ষেত্রেও বাজিমাত করবে।

এর মধ্যেই টেক্সাসের অস্টিনে ‘রোবো ট্যাক্সি’ উদ্বোধনের কথা আছে মাস্কের। বিশ্লেষক ড্যান আইভস বলেন, ‘টেসলার ভবিষ্যতের ৯০ শতাংশ নির্ভর করছে স্বচালিত ও রোবোটিক প্রযুক্তির সাফল্যের ওপর। কিন্তু মাস্ক যদি নিজেই মনোযোগ না দেন, তাহলে সেই ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

টেসলার বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরেই চলছে #টেসলাটেকডাউন নামে সামাজিক মাধ্যমভিত্তিক প্রচার। রাস্তায়ও চলছে প্রতিবাদ। ফল হলো—চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে টেসলার গাড়ি বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশ, মুনাফা কমেছে ৭০ শতাংশের বেশি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মাস্কের সম্পদ সর্বোচ্চ ৪৮৬ বিলিয়ন বা ৪৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উঠেছিল; এখন তা কমে ৩৯৩ বিলিয়ন বা ৩৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। তা সত্ত্বেও তিনি এখনো বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘এটা শুধু প্রযুক্তি বা টেসলার বিরুদ্ধে নয়, এটা গণতন্ত্র ধ্বংসে মাস্কের ভূমিকার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অবস্থান নেওয়া।’ অর্থাৎ বিষয়টি রাজনৈতিক। সেই সঙ্গে খোদ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে মাস্কের।

ট্রাম্পের বাজেট বিলকে বিরক্তিকর ও জঘন্য আখ্যা দিয়েছেন ইরন মাস্ক। তাঁর মত, এই বিল পাস হলে মার্কিন নাগরিকদের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। এরপর ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি, স্পেসএক্সসহ মাস্কের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিল করা হলে ব্যয় অনেকটাই কমবে। এসব চুক্তির মূল্য প্রায় ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

কিন্তু বাস্তবে স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচির এতটাই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে যে সেখান থেকে সরে আসা ট্রাম্পের পক্ষে সহজ হবে না। এখনো তিনজন নাসা নভোচারী স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছেন। একপর্যায়ে মাস্ক নিজেই বলেছিলেন যে তিনি ড্রাগন বন্ধ করে দেবেন; পরে অবশ্য মন্তব্যটি ফিরিয়ে নেন।

বিষয়টি পরিস্কার, ট্রাম্প-মাস্কের বন্ধুত্বের আপাত অবসান ঘটছে; কিন্তু পরস্পরের ওপর তাঁদের নির্ভরশীলতা শেষ হয়েছে কি না, তা এখনো পরিস্কার নয়। তবে রাজনীতির এই উত্তাপ মাস্কের প্রযুক্তি সাম্রাজ্যে কতটা ধাক্কা দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ