কুমিল্লায় সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি গরুর চামড়া। মাঠপর্যায়ে মৌসুমি খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ এলাকায় ২ লাখ টাকা দামের একটি বড় গরুর চামড়া মাত্র ২০০ টাকায় কিনেছেন। তবে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া ৪০০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায় কিনেছেন। সরকার নির্ধারিত দামে যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা।

ঈদের দিন শনিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর লাকসাম রোডের কাসেমুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনামূল্যে দান করা ১৬ শতাধিক গরুর চামড়া বিক্রির জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত শহরতলীর আমতলী এলাকার পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ী মোকতার হোসেন সমকালকে বলেন, এতিমখানা থেকে এসব ছোট বড় চামড়া গড়ে ৫৬০ টাকায় কিনেছি। তবে নগরীর অন্য এলাকা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনেছি গড়ে ৪৫০ টাকায়। 

চামড়া ব্যবসায়ী মোকতার বলেন, অধিকাংশ এলাকায় ২ লাখ টাকা দামের একটি বড় গরুর চামড়া মাত্র ২০০ টাকায় কিনেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে আমরা কিনেছি বেশি দাম দিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকার চামড়াব্যবসা এখনো সিন্ডিকেটের কবলে। ১০ থেকে ১৫ দিন বাড়িতে রেখে লবন দিয়ে ঢাকায় পৌঁছনো পর্যন্ত লাভ না লোকসান হয়; তা-ও বলতে পারছি না। ঝুঁকি নিয়ে কিনেছি। 

নগরীর রেসকোর্স এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী রমিজ মোল্লা বলেন, গরুর চামড়া গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে গড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এর মধ্যে লেবার ও পরিবহন খরচ আছে।

কুমিল্লা শহরে চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বৃহৎ এলাকা ঋষি পট্টিতে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন পট্টির চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ভারত সীমান্ত দিয়ে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ভারতে পাচার প্রতিরোধে সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। কুমিল্লা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল রেজাউল কবির জানান, বিজিবি কুমিল্লা সেক্টরের অধীনে হবিগঞ্জ থেকে শুরু করে ফেনী জেলা পর্যন্ত মোট ৩২৭ কিলোমিটার সীমান্ত। কুমিল্লা সেক্টরের অধীনে ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন, ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন, ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এবং চার বিজিবি ব্যাটালিয়ন টহল জোরদার করেছে ও সতর্ক রয়েছে। 

এর আগে গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে

তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে বাসিন্দাদের সুপেয় পানির প্রধান উৎসটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসার বরাত দিয়ে আইআরএনএর খবরে বলা হয়, তেহরানে খাবার পানি সরবরাহের পাঁচটি উৎসের একটি আমির কবির বাঁধ। সেটিতে এখন মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি আছে। এটি জলাধারটির মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।

বেহজাদ পারসা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই পরিমাণ পানি দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানের খাবার পানির চাহিদা মেটানো যাবে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দীতে খুব একটা দেখা যায়নি।

এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।

বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।বেহজাদ পারসা, তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক

পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।

ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।

জুলাই ও আগস্ট মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে ছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’

ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনপ্রচণ্ড গরমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ইরানিদের কম পানি ব্যবহারের আহ্বান২০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ