সোনারগাঁয়ের যুব মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
Published: 8th, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরী তার স্বামীকে নিয়ে কোরবানির গরুর মাংস চেয়ে ভিক্ষা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চারদিকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সম্প্রতি ‘তিন কন্যা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘একটা গরুর রান ভিক্ষা দেন গো’ ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরী, তার স্বামী ও সঙ্গে আরও দুটি শিশু এবং এক তরুণীকে দেখা গেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শ্যামলী চৌধুরী ও তার স্বামী একটি বাড়ির দরজার সিঁড়ির সামনে বসে ঘরের ভেতর থাকা মানুষকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কিগো বৃষ্টির মাঝে বইয়া রইছি একটু গোস্ত দেন না গো।’ ঠিক তখনই স্ত্রীও বলে ‘দেন না গো একটু গোস্ত।’
এরপর আবারও স্বামী বলেন, ‘আপনারা বড়লোক মানুষ আপনারা একটা রান দিয়া দিলেই হইবো। পারলে আমাগো একটা রান দিয়া দেন বাড়িতে গিয়া খামুনে, আপনেগো লাইগা দোয়া করমুনে।’
এ সময় স্বামীকে উদ্দেশ করে শ্যামলী চৌধুরী বলেন, ‘তুই খালি রান চাস কেন? হেতে তোরে গোস্ত (মাংস) দিতো না। দেনগো আমাগো দুগা গোস্ত দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে দেন। মেঘের (বৃষ্টির) মধ্যে আসছি, গোস্ত দিলে আল্লাহ আপনেগো বরকত দিবো। কালকে দেইখা গেছি আপনাগো গরুটা বড় আছে।’
এর একপর্যায়ে ঘরের ভেতর থেকে এক পোটলা গোশত এনে তাদের হাতে তুলে দেন এক তরুণী। পরে মাংসের পোটলাটা হাতে নিয়ে উভয়ে বলে উঠলেন এতটুকু? এ সময় ভিডিওতে থাকা দুই শিশুর উদ্দেশে দম্পতির ভাষ্য ছিল, ‘দেখ পুতেরা (ছেলেরা) দেখ কতটুকু গোস্ত দিছে, বড়লোক মানুষ কতটুকু গোস্ত দিছে।’
শেষদিকে ওই তরুণীকে উদ্দেশ করে তার স্বামী বলেন, ‘আমাগো মোট ১০টা পোলা। তাদের জন্য ১০ পিস দিলেও তো হতো।’ এ সময় তারা মাংসের পোটলা ছুড়ে মেরে চলে যায়। ভিক্ষুকের বেশে তারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে বলতে থাকেন, আপনেগো গোস্ত লাগতো না।
স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ পাওয়ার আশায় এই সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শ্যামলী চৌধুরী ও তার স্বামী ভিক্ষুকের বেশে অভিনয় করে তার মেয়ের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে আশেপাশের লোকজন ও নেটিজেনরা নিন্দা প্রকাশ করে নানা সমালোচনা করেছেন। অনেকে নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরীর ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ দল। জনগণের কাছে ভিন্নভাবে নিজেকে জাহির করার জন্য তারা এ ধরনের ভিডিও করে আলোচনায় থাকতে চাইছে। আমি মনে করি, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
উল্লেখ্য, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই নেত্রী। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে তার ছবি রয়েছে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও র জন ত য বল গ য বল গ ন র য়ণগঞ জ ক রব ন উপজ ল উপজ ল আওয় ম ল গ স ন রগ আওয় ম আপন গ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ত্বকী হত্যার বিচার নিয়ে বর্তমান সরকার কিছুটা তৎপর, তবে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না’
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার নিয়ে বর্তমান সরকার কিছুটা তৎপর হলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর বাবা রফিউর রাব্বি। নারায়ণগঞ্জ নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৭ মাস উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে আজ রোববার সন্ধ্যায় এ কথা বলেন তিনি।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। এই সরকারও শেখ হাসিনা সরকারের মতো বিচার অসমাপ্ত রেখে কাঠগড়ায় দাঁড়াক—তা আমরা চাই না। অবিলম্বে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবি জানাই।’
নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, বাসদের জেলা আহ্বায়ক নিখিল দাস, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, মহিলা পরিষদের জেলা সহসম্পাদক শোভা সাহা প্রমুখ।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ত্বকীর বাবা বলেন, দুর্বৃত্ত রক্ষার সরকার পালিয়ে গেলেও এখন নতুন নতুন দুর্বৃত্ত তৈরি হচ্ছে। আগের দুর্নাম ঘুচিয়ে এখনো বিচার বিভাগ মুক্ত হতে পারেনি। এখনো বহু ক্ষেত্রেই বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা চলছে। দেদার মামলা–বাণিজ্য চলছে, মব জাস্টিসের নামে বর্বরতা চলছে, সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এখনো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
আদালতে দ্রুত ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়ে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সরকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখবে, ধ্বংসস্তূপ থেকে বিচারব্যবস্থাকে তুলে এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় ত্বকী। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৪ সালে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই এ বিষয়ে অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে। কিন্তু ওই অভিযোগপত্র আজও দেওয়া হয়নি।