নির্বাচনের একতরফা সময়সীমার ঘোষণা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ: সৈয়দ এমরান সালেহ
Published: 9th, June 2025 GMT
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ বলেছেন, একতরফাভাবে এপ্রিলে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করে প্রধান উপদেষ্টা (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) নতুন করে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত করছেন। এতে সরকারের উদ্দেশ্য এবং নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের এমন আচরণ জনগণকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথমুখী করতে পরে।
আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সদরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সৈয়দ এমরান সালেহ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির এই নেতা বলেন, দু-একটি দল ছাড়া বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় শক্তিসমূহের মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি উঠলেও হঠাৎ এপ্রিলে নির্বাচনের একতরফা টাইমলাইন (সময়সীমা) ঘোষণা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। দুঃখজনক হলেও সত্য, কর্তৃত্ববাদী একনায়ক হাসিনার মতো নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করছেন মুহম্মদ ইউনূস। সরকার যদি নির্বাচনসংক্রান্ত একতরফা পরিকল্পনা পরিহার না করে, তবে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য অপেক্ষারত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবে না।
আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের নতুন সময়সীমা ঘোষণার দাবি জানিয়ে এমরান সালেহ বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে সভা-সমাবেশের ওপর যতই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক না কেন, তারেক রহমান ডাক দিলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীতে তিল ধারণের জায়গা থাকবে না। জনগণ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ছাড়বে না। এমন পরিস্থিতি বিএনপি চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হতে দেবে না।
ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি এবং চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার, আহত ও বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে হামলা-মামলা, জেল, জুলুমের শিকার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমর ন স ল হ সরক র র ব এনপ র সময়স ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
১ আগস্টের কি সময়সীমা বাড়াবেন ট্রাম্প, কী অপেক্ষা করছে
আগামী ১ আগস্টের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গেল। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আর ৩০ শতাংশ নয়, বরং ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করতে হবে।
এ নিয়ে মোট ছয়টি দেশের সঙ্গে কাঠামোগতগত চুক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রের। সেই সঙ্গে আরও ২৪টি দেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১ আগস্ট থেকে তাদের কী হারে শুল্ক হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ১ আগস্টের পর কী হবে।
১ আগস্টের সময়সীমা অতিক্রান্ত হতে আর বেশি সময় নেই। এর মধ্যে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হবে না, তাদের নতুন হারে পাল্টা শুল্ক দিতে হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র আর এই সময়সীমা বাড়াবে না বলেও জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ার্ড লাটনিক। মোট ২৪টি দেশকে তিনি পৃথকভাবে চিঠি দিয়েছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ফিলিপাইন, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পাল্টা শুল্ক আরোপের সময়সীমা ১ আগস্টের পর আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাটনিক জানিয়েছেন, নতুন শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে।
তাই আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না, কোনো ছাড়ও নয়। ১ আগস্ট থেকেই শুল্ক কার্যকর হবে। শুল্ক বিভাগ সেদিন থেকেই নতুন হারে শুল্ক আদায় শুরু করবে, তারপর যা হওয়ার তা–ই হবে। ফক্স নিউজ সানডেতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন লাটনিক।
এর আগে একাধিকবার শুল্ক আরোপের সময়সীমা বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন ট্রাম্প।
চলতি মাসের শুরু থেকেই ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দেশে শুল্ক আরোপের হুমকিসূচক চিঠি পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ছোট দেশগুলোর ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও করছেন।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভেন ডারলফ আল–জাজিরাকে বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব শুল্ক চুক্তি হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে মোটেও ছোটখাটো পরিবর্তন নয়। এসব চুক্তি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এসব চুক্তির প্রভাব হুমকির চেয়ে কম হলেও তা অবহেলা করার মতো নয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এখনো শুল্কের পুরো প্রভাব বাজারে পড়েনি। অনেক প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই পণ্য মজুত করে রেখেছে, যাতে দাম বাড়লেও তাৎক্ষণিক চাপ না পড়ে। বর্তমানে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, গাড়ি ও ইস্পাতের ক্ষেত্রে রয়েছে আরও বেশি হারে শুল্ক। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্ক হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ; ১ আগস্ট থেকে তা বেড়ে ২০ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছাবে।
ট্রাম্প যদি ১ আগস্ট অধিক হারে শুল্ক নাও বাড়ান, তারপরও অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও বাড়বে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে প্রবৃদ্ধিতে। বিবিবিএ রিসার্চের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুধু বর্তমান শুল্ক হারেই বৈশ্বিক জিডিপি স্বল্পমেয়াদে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং মধ্যমেয়াদে ২ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে।
ইউরোপের ফ্লোরেন্সে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল ইকোনমিকসের পরিচালক বার্নার্ড হোকম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো তেমন একটা মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। কারণ, শুল্কের আশঙ্কায় অনেক দেশ আগেই পণ্য পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অপেক্ষায় আছে, শেষ পর্যন্ত শুল্ক কীভাবে তাদের প্রভাবিত করবে, সেটা বোঝার চেষ্টা করছে তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই গড় শুল্ক হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করে, তাহলে প্রভাব হবে আরও ব্যাপক।
ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা এসব আশঙ্কা একাধিকবার উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, যেসব ইতিবাচক অর্থনৈতিক তথ্য আসছে, তা থেকে প্রমাণিত হয়, অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস সব সময় ঠিক নয়।
এদিকে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শুল্কের সময়সীমা না বাড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে এই যে বাজার এখন পর্যন্ত ট্রাম্পর ঘোষণা গুরুত্বসহকারে নেয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যদি আরও একবার মেয়াদ বাড়ান, তাহলে বাজারের কাছে ট্রাম্পের ঘোষণা ও অবস্থান লঘু হয়ে যাবে।
যারা চিঠি পেয়েছেযেসব দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে শুল্কের হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তার মধ্যে আছে ব্রাজিল (৫০%), মিয়ানমার (৪০%), লাওস (৪০%), কম্বোডিয়া (৩৬%), থাইল্যান্ড (৩৬%), বাংলাদেশ (৩৫%), কানাডা (৩৫%), সার্বিয়া (৩৫%), ইন্দোনেশিয়া (৩২%), আলজেরিয়া (৩০%), বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভেনিয়া (৩০%), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৩০%), ইরাক (৩০%), লিবিয়া (৩০%), মেক্সিকো (৩০%), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩০%), শ্রীলঙ্কা (৩০%), ব্রুনেই (২৫%), মলডোভা(২৫%), জাপান (২৫%), কাজাখস্তান (২৫%), মালয়েশিয়া(২৫%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৫%), তিউনিসিয়া (২৫%) ও ফিলিপাইন(২০%)।