ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে জমি থেকে শসা চুরিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে নারীসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

খায়রুল আলম।

পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সোমবার রাতে সুহেলের জমি থেকে জালাল মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া শসা চুরি করে বলে অভিযোগ উঠে। চুরির সময় হৃদয়কে হাতেনাতে আটক করে বলে দাবি সুহেলের। পরে চুরির বিষয় হৃদয়ের পরিবারকে অবহিত করে সুহেলের পরিবার। এরপর হৃদয়ের পক্ষের লোকজন সুহেলের লোকদের কাছে হাত ধরে ক্ষমা চয়। কিন্তু এই ‘হাত ধরে ক্ষমা’ চাওয়াকে অবমাননা হিসেবে দেখেন হৃদয়ের পক্ষের মাতব্বর মীর্জা আলী। তিনি বিষয়টি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।

উভয়পক্ষের লোকজন সোমবার রাতেই গোষ্ঠীর মাতব্বরদের নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করে মঙ্গলবার ভোরে সংঘর্ষে জড়ানোর। এরপর মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন মুখোমুখি হয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সুহেল মিয়ার পক্ষের আহতরা হলো- জুয়েল মিয়া, সুহেল মিয়া, লুদন মিয়া, জসিম মিয়া, কাউছার মিয়া, আরমান মিয়া, সালমান মিয়া, সালাম মিয়া, তুহিন বেগম, জুনাইদ মিয়া, ফকির চান বেগম, ফারুক মিয়া, সবুজ মিয়া, মুন্না মিয়া, ইমরান হোসাইন, সফর আলী, জিহাদ মিয়া, পিন্টু মিয়া, জাফর মিয়া, সুলেমান মিয়া ও সজিব মিয়া।

অন্যদিকে হৃদয় মিয়ার পক্ষের আহতরা হলেন- তোতা মিয়া, সরাজ মিয়া, জালাল মিয়া, ফুলজাহান বেগম, রাব্বি মিয়া, সাদেক মিয়া, সেলিম মিয়া, রজব আলী, কাউছার মিয়া, আলম মিয়া, আমীর আলী, ডালিম মিয়া, সেলিম মিয়া, রজব আলী, কাউছার আলী, আলম আলী, আমির আলী, ডালিম মিয়া, শামীমা আক্তার, ইনন মিয়া, ছফিল উদ্দিন, উত্তম মিয়া, আক্তার মিয়া, আজাদ মিয়া, নুরল হক, এনামুল হক, এনাব আলী, দুলাল মিয়া, জিলু মিয়া, সোরাব আলী, উজ্জ্বল মিয়া, মুরসালিন সরকার, রাজ্জাক সরকার, সুমন সরকার, হাফিজ মিয়া, এমরান আলী, নাবিন আলী, ফজু মিয়া, আকিক মিয়া, সাহেদ মিয়া ও নজরুল হক সরকার। আহতদের একাংশকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হৃদয় মিয়ার পক্ষের মীর্জা আলী ও তার ছেলে রাকিবুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা শসা চুরির অভিযোগ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আমরা অন্তত ৪০ জন আহত হই।

অন্যদিকে, সুহেল মিয়ার ছেলে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাতে হৃদয় আমাদের জমি থেকে শসা চুরি করে। তাকে ধরার পর বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়। কিন্তু উল্টো তারা আমাদের লোকজনদের ওপর হামলা করে।

নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, শসা চুরিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আহতের সংখ্যা ২০ জন বলে জানতে পেরেছি।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় বেলা ১১টা পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের টহল অব্যাহত ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় শ্রীঘর গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স রনগর ব র হ মণব ড় য় ন স রনগর উভয়পক ষ স ঘর ষ র র পর ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি

জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই‌ ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”

এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।

অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও‌ সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?

এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
  • রংপুরে হিন্দুপাড়ায় হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল