জাফলংয়ে এবার পর্যটকদের ওপর চোরাকারবারিদের হামলা
Published: 10th, June 2025 GMT
গোয়াইনঘাটের জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় সোমবার বিকেলে স্থানীয়দের সঙ্গে পর্যটকদের হাতাহাতির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, জাফলং গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে শাহিন আহমদ ভারতের ডাউকি থেকে চোরাই পণ্য নিয়ে জাফলং বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় তাকে ধাওয়া করে বিজিবি। এক পর্যায়ে স্থানীয় একটি দোকানে মালামাল রেখে পালিয়ে যান শাহিন। ওই দোকানের পাশে পার্কিং করা ছিল ঢাকার ডেমরা থেকে আসা সেলফি পরিবহনের একটি বাস। বাসে আসা পর্যটকদের কাছে ভারতীয় পণ্য কোন দোকানে রাখা হয়েছে তা জানতে চায় বিজিবি। একজন পর্যটক সেই দোকান দেখিয়েও দেন। এর কিছুক্ষণ পর চোরাকারবারবারী শাহিন, গুচ্ছগ্রামের ফজলসহ স্থানীয় কিছু লোক ওই পর্যটকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রকাশ্যে যুবক ও কিশোররা ডাউকি থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসে। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি বিজিবি অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে।
পর্যটকদের উপর হামলা প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, তারা মুরব্বিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। বড় কিছু হয়নি, তুচ্ছ ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী জানিয়েছেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার জাফলং এলাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল কম। গরমের কারণে উপস্থিতি কম বলে স্থানীয়রা দাবি করলেও একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সোমবারের ঘটনার কারণে মঙ্গলবার পর্যটক কম এসেছেন।
জাফলংয়ে পর্যটকদের সঙ্গে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বিব্রতকর উল্লেখ করে সোনা মিয়া কটেজ অ্যান্ড রিসোর্টের মালিক খায়রুল মিয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করি পর্যটকদের যথাযথ সম্মান দিতে। মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনার কারণে যেমন দুর্নাম হয় তেমনি বাইরের পর্যটকরাও নিরুৎসাহিত হন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে প্রশাসনের ভূমিকা চাই
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রে নানাভাবে পর্যটকদের হয়রানি, হেনস্তা ও মারধরের ঘটনা নতুন নয়। জাফলংয়ে আগেও পর্যটকদের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছিল। কয়েক বছর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সে ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। এবারও সেখানে পর্যটকদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের হাতাহাতি হয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জেও একটি পর্যটন এলাকায় যেতে পর্যটকদের বাধা দিয়েছে স্থানীয় ধর্মীয় গোষ্ঠী। এসব ঘটনা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সুখ্যাত সিলেটের জন্য নেতিবাচক তো অবশ্যই, উদ্বেগজনকও বটে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প–সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে পর্যটকদের হাতাহাতি হয়। তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এ সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। পর্যটকদের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি। তবে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসন তৎপর।
আগের দিন রোববার কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে যেতে পর্যটকদের বাধা দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি প্রকাশ পায়। ভিডিওতে দেখা যায়, উৎমাছড়ায় বেড়াতে আসা কিছু মানুষ সেখানে সময় কাটাচ্ছিলেন। বিভিন্ন বয়সের পুরুষদের সেখানে দেখা যায়। এলাকাবাসী পরিচয় দিয়ে কিছু মানুষ সেখানে হাজির হয়ে পর্যটকদের উৎমাছড়া থেকে চলে যেতে বলেন। এটি কোনো পর্যটনকেন্দ্র নয় বলেও ঘোষণা দেন তাঁরা এবং এখানে যাতে কেউ না আসেন, সেটি প্রচার করতেও বলেন তাঁরা।
এলাকাবাসী বলে পরিচয় দেওয়া আগত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুব জমিয়তের সহসভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটনের কথা বলে কিছু মানুষ ওই এলাকায় গিয়ে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যক্রম করছেন। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মুরব্বি–যুবকদের নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পর্যটনকেন্দ্রটি নিয়ে যাতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর অংশ হিসেবে গত রোববার বিকেলে বেড়াতে আসা লোকজনকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।’
পর্যটনকেন্দ্রের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ রক্ষা করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো এলাকা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হবে কি হবে না, তা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার নামে কোনো পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের কেউ মারধর, হেনস্তা বা বাধা দেবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। এলাকাবাসীর নামে কোনো পক্ষ এখানে আইন অমান্য করবে, ক্ষমতাচর্চা করবে বা মব ভায়োলেন্স তৈরি করবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।