টেস্টের রজতজয়ন্তীতে ক্রিকেট কার্নিভাল
Published: 11th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি যেদিন টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার রজতজয়ন্তী উদযাপন করবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, সেদিন কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা থাকবে মাঠে। লঙ্কায় নাজমুল হোসেন শান্তদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে ঢাকার উৎসব কতটা রঙিন হবে।
মর্যাদা পাওয়ার ২৫ বছরে টেস্ট ক্রিকেটকে বর্তমান প্রজন্ম কতটা সুরক্ষা দিতে পারলেন স্মৃতি রোমন্থন মঞ্চের খুবই প্রাসঙ্গিক আলাপন। অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিসিবির সভাপতি হিসেবে অন্তত সেকাল-একালের মেলবন্ধন করার চেষ্টা করলেও করতে পারেন। কারণ, সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তাবক ছিলেন তিনি। বুলবুলের চাওয়াকে সম্মান দেখিয়ে ক্রিকেট কার্নিভাল আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছে বিসিবি। ২২ জুন দেশের ৬৪ জেলায় শুরু হয়ে ২৬ জুন মিরপুরে সমাপ্তি হবে ক্রিকেট কার্নিভালের।
বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উদ্যোগে ৬৪ জেলায় একযোগে শুরু হবে অনূর্ধ্ব-১২ ক্রিকেট কার্নিভাল। ছেলে ও মেয়ে খুদে ক্রিকেটাররা সাম্যের স্লোগানে খেলবে ম্যাচ। গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে সমকালকে বলেন, ‘বুলবুল ভাই টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার রজতজয়ন্তী উদযাপনের কথা মৌখিকভাবে বলেছেন। আমরা ২৫ বছরকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে চাই। ক্রিকেট কার্নিভাল দিয়ে উদযাপন করা হবে। ২৬ জুন মিরপুরে ফাইনালে জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন।’
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার রজতজয়ন্তীতে অভিষেক টেস্ট দলের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, অফিসিয়ালদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হবে কিনা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে ফাহিম সিনহাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেওয়া হলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উত্তর দেননি।
গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ম্যানেজার আবু ইমাম মো.
ক্রিকেট কার্নিভাল বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিবি মিডিয়া বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার রাবীদ ইমামকে। আসলে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কাছে দেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়া, অভিষেক টেস্ট খেলার অনুভূতি অন্যরকম। তাঁর পরিচিতির একটা বড় অংশজুড়ে আছে অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরি। খেলোয়াড়ি জীবনের সে রোমাঞ্চ আজও সতেজ বুলবুলের কাছে। তাই তো টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার রজতজয়ন্তী উদযাপনকে উৎসবমুখর করতে চান তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল