কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট পাটোয়ারটেক। এই জায়গাটি স্থানীয়ভাবে ‘পাথর রানী বিচ’ বা ‘পাথুরে বিচ’ নামেও পরিচিত। সৈকতের বুকে ছড়িয়ে থাকা পাথর, সবুজ পাহাড় ও নীল সমুদ্র এই তিনের মিলনে সেখানে গঠিত হয়েছে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। যা পর্যটকদের বিমোহিত করছে।  

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো হালকা রোদ—এই আবহে পাটোয়ারটেক সৈকতে ভিন্নমাত্রার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। 

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক রুবাইয়া সুলতানা বলেন, “সমুদ্রের এমন রূপ আগে দেখিনি। পাথরের গায়ে ঢেউ এসে পড়ার শব্দ আর ঠাণ্ডা বাতাস—সব মিলিয়ে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। এখানে এসে প্রকৃতির সঙ্গে সত্যিই একাত্ম হওয়া যায়।”

আরো পড়ুন:

দেড় বছর পর পর্যটকে মুখর বগালেক 

ঈদের আনন্দে প্রাণবন্ত কুয়াকাটা

রাজশাহীর পর্যটক দম্পতি আরিফ ও মুনিয়া বলেন, সমুদ্র মানেই তো শুধু বালুকাবেলা এই ধারণা বদলে দিল পাটোয়ারটেক। পাথর আর সাগরের এমন মিশ্রণে ছবির মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি এসে রোমান্সটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে আসা জুবায়ের হোসেন বলেন, “অন্যান্য পয়েন্টের চেয়ে এখানে মানুষ কম, একটু নির্জনতাও পাওয়া যায়। পাথরের উপর দাঁড়িয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকলেই সব ক্লান্তি যেন উড়ে যায়।”

পর্যটকদের নিরাপত্তায় পাটোয়ারটেক পয়েন্টেও ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও সি সেইফ লাইফগার্ড সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

ইনানী ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পাটোয়ারটেক এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে যারা প্রকৃতিকে কাছ থেকে অনুভব করতে চান, তাদের কাছে এই সৈকত হয়ে উঠছে নতুন গন্তব্য।”

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকরা ভ্রমণ শেষে নিরাপদে যাতে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।”

ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটক সমাগমের এমন চিত্র কক্সবাজারের প্রতিটি স্পটেই ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পাটোয়ারটেক যেন আপন আলোয় আলোকিত। মেঘ-বৃষ্টির চিত্রের সঙ্গে পাথরের নীরব সৌন্দর্য মিলে এ জায়গাকে করে তুলেছে ব্যতিক্রম।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর যটক উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ