আড়তদাররা প্রতিকেজি আমে চাষির কাছ থেকে দেড় টাকা কমিশন কেটে রাখার সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছেন। আজ বুধবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের ফলে আপাতত অচলাবস্থা দূর হচ্ছে।

বৈঠকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক, রাজশাহীর বানেশ্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও রহনপুর এবং নওগাঁর সাপাহারের আম আড়ৎদার সমিতির নেতারা, আম চাষি, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসার উপস্থিত ছিলেন।

শিবগঞ্জের ইউএনও আজাহার আলী বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে ৪০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনাবেচা হবে। কেজিতে আড়তদাররা দেড় টাকা কমিশন পাবেন। বিষয়টি মাইকে প্রচার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের আম কেনাবেচার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রেজ্যুলেশন করে তা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এটি পাওয়ার পর রাজশাহী বিভাগের জন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সলা, কাঁটা ও লেখার বিপরীতে অতিরিক্ত আম দেওয়ার প্রথা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে ৪০ কেজিতে মণ এবং কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশনের বাইরে কোনো চার্জ নিতে পারবেন না আড়তদাররা। এটিও শুধুমাত্র আড়তে আম বেচতে প্রযোজ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাজার মনিটরিং টিম কাজ করবে। সিদ্ধান্ত না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ৫ জুন প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা রাজশাহী বিভাগে কেজি দরে আম বিক্রির ঘোষণা দেন। একে বেঁকে বসেন আড়তদাররা। তারা ৫৪ কেজিতে আমের মণ না ধরলে প্রতিকেজির বিপরীতে চাষির কাছে ৩ টাকা করে কমিশন দাবি করেন। এতে রাজশাহীর আম বাজারে দেখা দেয় অচলাবস্থা। এ নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আলোচনা হলেও সমাধান আসেনি।

গতকাল বৈঠক শেষে কানসাট আম আড়তদার সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, ‘সবার আন্তরিকতায় একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, সব পক্ষ এটি বাস্তবায়ন করবে।’

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে গতকাল আড়তদারদের ইচ্ছেমতো আম কিনতে দেখা যায়। চাষিরা আম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভোলাহাট বাজারে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নেন আড়তদাররা। গোমস্তাপুরের রহনপুর বাজারে দু’দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল ৫০-৫২ কেজিতে মণ ধরে কেনাবেচা হয়।

কানসাট বাজারে কেজি দরে ও প্রতিকেজিতে ৩ টাকা কমিশনে আম কেনাবেচা হয়। আবার ৪৮-৫২ কেজিতে মণ ধরেও আম নেন আড়তদাররা। এ বাজারে ৩ টাকা কমিশনের বিনিময়ে খিরসাপাত ৫০-৬৫, লক্ষ্মণভোগ ১৫-২০, গুটি জাতীয় আম ১০-২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

কানসাট বিশ্বনাথপুর গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৩০ ক্যারেট লক্ষ্মণা আম কানসাট বাজারে এনে সকাল থেকে দুপর ১টা পর্যন্ত কোনো ক্রেতা পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে বেলা ৩টার দিকে তাহেরের আড়তে ৫৩ কেজিতে মণ ধরে বিক্রি করেছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম চ প ইনব বগঞ জ প ইনব বগঞ জ বগঞ জ র আড়তদ র আম ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ