বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট, সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওরের চিত্র আজ করুণ। ইজারাপ্রথা বাতিলের পর গত ২২ বছরে হাওরের উন্নয়নে বহু চেষ্টা করা হলেও তেমন কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি; বরং হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকা, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য এখন গভীর সংকটের মুখে। কার্যত প্রশাসনের নজরদারির অভাবে যে যেভাবে পারছে, এই হাওরের ক্ষতি করছে।

হাওরে প্রবেশের মুখেই চোখে পড়বে সারি সারি শতাধিক বোটহাউস। বিকট শব্দে জেনারেটর চলছে, আর যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে পলিথিনসহ নানা বর্জ্য। যে অভয়ারণ্যে ট্রলারচালিত নৌকা ঢোকাই নিষেধ, সেখানে অবাধে চলছে এসব কর্মকাণ্ড। এই হাওরে একসময় গড়ে দুই লাখ পাখির আনাগোনা ছিল, এবার পরিযায়ী পাখিও এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুন্দরবনের পর জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ জলাভূমি হিসেবে ঘোষিত টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার ঘোষণার পরও সুরক্ষিত ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ অভিভাবকহীন। সবাই মিলে ‘যেমন খুশি তেমন ধ্বংস’ করছে।

দীর্ঘ ৭০ বছর জলমহালে প্রচলিত ইজারাপ্রথার অধীনে ছিল টাঙ্গুয়ার হাওর। ইজারা বাতিলের পর থেকে এটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসে। উদ্দেশ্য ছিল হাওরের সম্পদ রক্ষা, সংরক্ষণ এবং হাওরপারের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। তবে সরকারি-বেসরকারি কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রশাসন ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে তেমন সাফল্য আসেনি।

মাছ, গাছ, পাখিসহ জীববৈচিত্র্যের আধার, বিশেষ করে মিঠাপানির মাছের জন্য বিখ্যাত এই হাওরে অবাধ আহরণের কারণে মাছ কমছে। হাওর ভরাট, বন ও আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের উৎপাত ও শিকারের ফলে কমছে পাখির সংখ্যা। পর্যটকদের অবাধ বিচরণও হাওরের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায়। জেলা শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। চারটি ইউনিয়নের ১৮টি মৌজাজুড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট-বড় বিল আছে ৫৪টি। ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল। বর্ষায় সব পানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় ‘সায়র বা সাগরে’। টাঙ্গুয়ার এলাকার ভেতরে ও তীরে রয়েছে ৮৮টি গ্রাম। এসব গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হাওরের ওপর নির্ভরশীল।

ইজারাপ্রথা বাতিলের পর কিছুদিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাহারা ছিল, সঙ্গে ছিলেন কমিউনিটি গার্ডের সদস্যরাও। তবে বর্তমানে বিশাল হাওরের পাহারায় আছেন মাত্র ১৬ জন আনসার সদস্য। হাওর উন্নয়ন বা ব্যবস্থাপনায় এখন কোনো কার্যকর প্রকল্প নেই। এই অবস্থায় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষায় গুরুতর ব্যবস্থা না নিলে স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বনটি হুমকির মুখে পড়বে।

চায়না দুয়ারি জাল জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। অনুমোদন নেই এই জালের। কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এই জাল। যেহেতু কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ, তাই কৌশলে এই জাল ব্যবহার করা হচ্ছে হাওরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন ষ র জ বন জ বব চ ত র য র হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ