১২ বছরের মো. ইসমাঈল কখনো নৌকার দাঁড় বায়, জাল ওঠায়-নামায়, কখনো মাছ তুলে আড়তে নেয়, কখনো নৌকা পাহারা দেয়। এভাবেই মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউয়ে শৈশব কাটছে তার। চরম কষ্টের মাছ ধরার অনিরাপদ কাজ তার ভালো লাগে না। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ঝুঁকিপূর্ণ পেশাটি ছাড়তে পারে না সে।

ভোলা সদরের শান্তিরহাট এলাকার ইসমাঈলের মতো এমন অসংখ্য শিশুর শৈশব কাটছে মাছ ধরার নৌকায়। এসব শিশুর কোনো পরিসংখ্যান জেলার সরকারি দপ্তরগুলোতে পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জেলায় ৩০ হাজারের বেশি জেলেশিশু রয়েছে।

মাছ ব্যবসায়ী, জেলে ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাবের সংসার আর অসচেতনতায় অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে মাছ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাচ্ছেন। শিশুজেলেদের আয়ের উৎস বানাচ্ছেন। আবার অনেকে স্কুলে ভর্তি করলেও মাছ ধরতে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নৌকাবাসী জেলেরা সন্তানদের নিয়ে সারা দিন নদীতে মাছ ধরেন। রাতের বেলা মেঘনা নদীর পাশের কোনো খালে আশ্রয় নেন। অন্ধকার ভোরে উঠে নদীতে শৌচকার্য সেরে আবার মাছ ধরতে যান।

ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.

মনির উদ্দিন বলেন, তাঁর স্কুলে চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ৯টি শিশু বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যায়। এরা নিয়মিত স্কুলে আসে না। দুই-তিন মাস পরে আসে, কিছুদিন ক্লাস করে পরীক্ষা দেয়। এদের নিয়মিত করার জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় ‘৩৬ হাজার’ শিশু
বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত-২০১৮) অনুযায়ী, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত করা যাবে না। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এমন হালকা কাজ করতে পারবে। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে সেগুলোকে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকের মতে, শিশুদের নদী-সাগর মোহনায় মাছ ধরার কাজ সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ যেকোনো সময় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

ভোলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলায় মোট জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৪৪৪ জন। এর মধ্যে ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৪ জন। কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৪৬, যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম দিচ্ছে ২৩ হাজার ১৬০ জন। তবে ভোলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে শিশুজেলের কোনো পরিসংখ্যান নেই।
ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, ইলিশা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী ও সাগর মোহনায় ছোট ও মাঝারি নৌকাগুলোতে দুই-তিনজন করে শিশুজেলেকে মাছ ধরার কাজে সাহায্য করতে দেখা যায়। ভোলা মৎস্য কার্যালয়ের হিসাবে জেলায় ছোট-মাঝারি নৌকা আছে প্রায় ১৮ হাজার। সাগরগামী ফিশিংবোট আছে সাত হাজার। একাধিক জেলে, মৎস্য আড়তদার ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গড়ে দুজন করে শিশু মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকলেও ভোলায় ৩৬ হাজার শিশু জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত।

জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ভোলায় কী পরিমাণ শিশু জেলেনৌকায় কাজ করে, তাঁদের কাছে এমন তথ্য নেই। তবে তাঁরা অভিযানের সময় ও মাছঘাটে সভা করার সময় মাঝিদের (নৌকার প্রধান) নিষেধ করেন, যেন শিশুদের নৌকায় মাছ ধরতে না ওঠান। কিন্তু তাঁরা শোনেন না। উল্টো নিষেধাজ্ঞার সময় শিশুদের নেতৃত্বেই মাছ ধরতে পাঠানো হয়। কারণ, শিশুদের জেল-জরিমানা হয় না।

ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সদর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ম ছ ধরত মৎস য ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ