মেঘনার ঢেউয়ে ভাসে জেলেশিশুদের শৈশব
Published: 12th, June 2025 GMT
১২ বছরের মো. ইসমাঈল কখনো নৌকার দাঁড় বায়, জাল ওঠায়-নামায়, কখনো মাছ তুলে আড়তে নেয়, কখনো নৌকা পাহারা দেয়। এভাবেই মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউয়ে শৈশব কাটছে তার। চরম কষ্টের মাছ ধরার অনিরাপদ কাজ তার ভালো লাগে না। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ঝুঁকিপূর্ণ পেশাটি ছাড়তে পারে না সে।
ভোলা সদরের শান্তিরহাট এলাকার ইসমাঈলের মতো এমন অসংখ্য শিশুর শৈশব কাটছে মাছ ধরার নৌকায়। এসব শিশুর কোনো পরিসংখ্যান জেলার সরকারি দপ্তরগুলোতে পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জেলায় ৩০ হাজারের বেশি জেলেশিশু রয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী, জেলে ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাবের সংসার আর অসচেতনতায় অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে মাছ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাচ্ছেন। শিশুজেলেদের আয়ের উৎস বানাচ্ছেন। আবার অনেকে স্কুলে ভর্তি করলেও মাছ ধরতে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নৌকাবাসী জেলেরা সন্তানদের নিয়ে সারা দিন নদীতে মাছ ধরেন। রাতের বেলা মেঘনা নদীর পাশের কোনো খালে আশ্রয় নেন। অন্ধকার ভোরে উঠে নদীতে শৌচকার্য সেরে আবার মাছ ধরতে যান।
ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.
ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় ‘৩৬ হাজার’ শিশু
বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত-২০১৮) অনুযায়ী, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত করা যাবে না। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এমন হালকা কাজ করতে পারবে। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে সেগুলোকে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকের মতে, শিশুদের নদী-সাগর মোহনায় মাছ ধরার কাজ সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ যেকোনো সময় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
ভোলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলায় মোট জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৪৪৪ জন। এর মধ্যে ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৪ জন। কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৪৬, যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম দিচ্ছে ২৩ হাজার ১৬০ জন। তবে ভোলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে শিশুজেলের কোনো পরিসংখ্যান নেই।
ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, ইলিশা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী ও সাগর মোহনায় ছোট ও মাঝারি নৌকাগুলোতে দুই-তিনজন করে শিশুজেলেকে মাছ ধরার কাজে সাহায্য করতে দেখা যায়। ভোলা মৎস্য কার্যালয়ের হিসাবে জেলায় ছোট-মাঝারি নৌকা আছে প্রায় ১৮ হাজার। সাগরগামী ফিশিংবোট আছে সাত হাজার। একাধিক জেলে, মৎস্য আড়তদার ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গড়ে দুজন করে শিশু মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকলেও ভোলায় ৩৬ হাজার শিশু জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ভোলায় কী পরিমাণ শিশু জেলেনৌকায় কাজ করে, তাঁদের কাছে এমন তথ্য নেই। তবে তাঁরা অভিযানের সময় ও মাছঘাটে সভা করার সময় মাঝিদের (নৌকার প্রধান) নিষেধ করেন, যেন শিশুদের নৌকায় মাছ ধরতে না ওঠান। কিন্তু তাঁরা শোনেন না। উল্টো নিষেধাজ্ঞার সময় শিশুদের নেতৃত্বেই মাছ ধরতে পাঠানো হয়। কারণ, শিশুদের জেল-জরিমানা হয় না।
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সদর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ম ছ ধরত মৎস য ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা