Prothomalo:
2025-09-18@03:32:22 GMT

অবিলম্বে অচলাবস্থা কাটুক

Published: 12th, June 2025 GMT

মানুষ যখন অন্য হাসপাতালে ভরসা পান না, তখন চোখের চিকিৎসার জন্য দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। এই বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

গত ২৮ মে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ রোগী ও  হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ-মারামারির পর সেখানে সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী ছুটিতে যান বা যেতে বাধ্য হন। ঈদের ছুটির আগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন-চারজন ছাড়া অন্য সবাই বাড়ি চলে গেছেন। তবে তাঁদের কেউ হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে যাননি। ঈদের ছুটির এক দিন আগে জরুরি বিভাগ চালু করা হলেও অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ আছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গতকাল বুধবার পর্যন্ত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অচলাবস্থা দূর হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে তাঁরা (আহত ব্যক্তিরা) আবার হাসপাতালে ফিরে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চোখের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪ জুন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আহত ব্যক্তিদের চোখ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। ওই দিন ৫৪ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৩০ জন বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে চোখ পরীক্ষা করান। অন্য ২৪ জন চোখ দেখাতে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যাননি।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ও হাসপাতালে ছিলেন, তাঁরা চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছেন। আবার আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের। বিশেষজ্ঞ কমিটিও তাঁদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি রোগীদের প্রদত্ত চলমান চিকিৎসা সন্তোষজনক বললেও আপাতত রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে প্রয়োজনে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইস্পাহানি হাসপাতালে যোগাযোগ করা এবং রোগীদের দ্রুত পুনর্বাসনের কথাও বলেছে তারা।

যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে রোগীর আস্থার সম্পর্ক থাকতে হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’ কিন্তু তাঁরা যে প্রস্তুতিই নিক না কেন, কাজটি করতে হবে রোগী ও তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে।

এর আগে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কে বেশি দায়ী—রোগী না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি হলো অবিলম্বে সেখানে চিকিৎসার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেখানে একটি পক্ষ, সেখানে তাদের উদ্যোগ সফল না–ও হতে পারে। উদ্যোগটি আসতে হবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। কাজটি করতে হবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। কারও ওপর একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

আহত ব্যক্তিদের অনেকে এখানে সুচিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দসই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে তাতে তাঁরা বিরোধিতা করবেন না বলে ধারণা করি। দেশের সেরা চক্ষু হাসপাতালটিতে আর এক দিনের জন্যও অচলাবস্থা চলুক, সেটা কাম্য নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ