রেস্টুরেন্টে হামলা, বিএনপি নেতার গাড়ি ভাঙচুর
Published: 12th, June 2025 GMT
কুমিল্লায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়ি ও একটি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে লালমাই উপজেলার ভুশ্চি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারীরা।
ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে লালমাই থানায় মামলা হয়েছে। গঠিত হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। মনিরুল হক চৌধুরী ও মোবাশ্বের আলম উভয়ে কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী বলে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বাগমারা উত্তর-দক্ষিণ, পেরুল উত্তর-দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। এরপর নাঙ্গলকোটের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে ভুশ্চি বাজারে পৌঁছে মাগরিবের নামাজ শেষে স্থানীয় করিম মজুমদার মার্কেটে মেজবান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে নাশতা করছিলেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর কয়েকজন অনুসারী সম্প্রতি মোবাশ্বের আলমের একটি বক্তব্যে ‘কুমিল্লা নিয়ে কটূক্তি কেন করা হলো’ এর কারণ জানতে চান। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী ওই রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। পরে হোটেলের কাছে রাখা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা।
লালমাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন মজুমদার জানান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন ও যুবদল নেতা আবু হানিফের নেতৃত্বে প্রথমে হোটেলটি ভাঙচুর ও ফাঁকা গুলি করে। পরে ভুশ্চি বাজার তদন্তকেন্দ্রের সামনে রাখা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়িটি ভাঙচুর করে এবং গাড়িতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়। হামলাকারীরা মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী।
তবে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লালমাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলের পাশে মসজিদে নামাজ আদায় করে বের হয়ে হট্টগোলের আওয়াজ শুনি। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি আসে এবং বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছু যুবক গাড়ি ও হোটেলে ভাঙচুর করে। এ সময় আমি দৌড়ে গিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে দিই।’
বিএনপি নেতা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার ভাষ্য, কী কারণে নিজ দলের লোকজন তাঁর গাড়ি ও স্থানীয় একটি হোটেল ভাঙচুর করেছে জানেন না তিনি। হামলার সময় তাঁকে নিরাপদ করে সরিয়ে নেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। থানায় মামলা হয়েছে।
হামলার বিষয়ে মনিরুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, যারাই হামলায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দল থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের কেউ জড়িত থাকলে রিপোর্ট পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন: হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে লালমাই উপজেলা বিএনপি। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটির সদস্য পদে আছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার উল্লাহ, জাহাঙ্গীর হোসাইন সর্দার ও সদস্য আবদুল খালেক। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় বুধবার দুপুরে লালমাই থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন– লালমাই উপজেলা বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিন, জাকির হোসেন, কাজী জাফর আহম্মদ রাজন, কামাল হোসেন, যুবদল নেতা আবু হানিফ, ডা.
লালমাই থানার ওসি শাহ আলম বলেন, হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ম ব শ ব র আলম ভ ন ত কর ম র তদন ত ব এনপ র র ঘটন য় অন স র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।