বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১২৪
Published: 12th, June 2025 GMT
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। এর মধ্যে পাঁচজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল বুধবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ১২৪ জনের মধ্যে বরগুনারই ৬৭ জন।
মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন দুজন। তাঁরা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের চান মিয়া (৭৫) ও পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকার গোসাই দাস (৮৫)। এ ছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইসরাত জাহান (২০) নামের আরেক রোগী মারা গেছেন। তিনি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুতিয়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন। জেলায় জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫২ জন, যা বিভাগের মোট আক্রান্তের ৬০ শতাংশের বেশি।
বরগুনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বরগুনা পৌর এলাকা ডেঙ্গুর প্রধান হটস্পট। প্রতিটি পাড়ায় এখন ডেঙ্গু রোগী আছেন। শহরের বাইরে গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। আজ হাসপাতালে ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এতে হাসপাতালের অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে ৫৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ১৮ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
হাসপাতালের চিকিৎসক নিহার রঞ্জন বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক–সংকটে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এক মাস ধরে বরগুনা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থাপনার অভাব গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
এ নিয়ে গতকাল বুধবার বরগুনায় জরুরি সভা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল যোগ দেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনায় কেন এত ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে, তাঁরা নিশ্চিত নন। যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, এখানে ডেঙ্গু সহায়ক পরিবেশ ময়লা-আবর্জনা, বদ্ধ জলাশয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব আছে। তাঁরা স্থানীয়দের সচেতন করতে বলেছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক–সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে দুজন চিকিৎসক পদায়ন করেছেন। আরও দুজন খুব শিগগির আসবেন।
তবে বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে পরিস্থিতি তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। বিভাগে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৩২৪ জন রোগী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৩ জন বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। বরিশাল সদর ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০০ জন, পটুয়াখালীতে ১৮ জন, পিরোজপুরে সাতজন ও ঝালকাঠিতে আছেন ছয়জন। ভোলায় এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক বর শ ল হয় ছ ন বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক