বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। এর মধ্যে পাঁচজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল বুধবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ১২৪ জনের মধ্যে বরগুনারই ৬৭ জন।

মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন দুজন। তাঁরা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের চান মিয়া (৭৫) ও পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকার গোসাই দাস (৮৫)। এ ছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইসরাত জাহান (২০) নামের আরেক রোগী মারা গেছেন। তিনি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুতিয়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন। জেলায় জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫২ জন, যা বিভাগের মোট আক্রান্তের ৬০ শতাংশের বেশি।

বরগুনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বরগুনা পৌর এলাকা ডেঙ্গুর প্রধান হটস্পট। প্রতিটি পাড়ায় এখন ডেঙ্গু রোগী আছেন। শহরের বাইরে গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। আজ হাসপাতালে ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এতে হাসপাতালের অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে ৫৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ১৮ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

হাসপাতালের চিকিৎসক নিহার রঞ্জন বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক–সংকটে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এক মাস ধরে বরগুনা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থাপনার অভাব গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

এ নিয়ে গতকাল বুধবার বরগুনায় জরুরি সভা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল যোগ দেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনায় কেন এত ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে, তাঁরা নিশ্চিত নন। যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, এখানে ডেঙ্গু সহায়ক পরিবেশ ময়লা-আবর্জনা, বদ্ধ জলাশয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব আছে। তাঁরা স্থানীয়দের সচেতন করতে বলেছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক–সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে দুজন চিকিৎসক পদায়ন করেছেন। আরও দুজন খুব শিগগির আসবেন।

তবে বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে পরিস্থিতি তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। বিভাগে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৩২৪ জন রোগী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৩ জন বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। বরিশাল সদর ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০০ জন, পটুয়াখালীতে ১৮ জন, পিরোজপুরে সাতজন ও ঝালকাঠিতে আছেন ছয়জন। ভোলায় এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক বর শ ল হয় ছ ন বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ