বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৭৭১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়ে অনুরোধ পেয়েছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। তবে বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে শেষার্ধে এ ধরনের অনুরোধের সংখ্যা কমে আসে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে ৪ হাজার ২২০টি কনটেন্টে (আধেয়) ব্যবহারকারীদের প্রবেশ সীমিত করে দেয় মেটা। পাশাপাশি একই বছরে গুগলের কাছে সরকার ৫ হাজার ৮২৭টি আধেয় সরানোর অনুরোধ করেছিল।

বিশ্বের শীর্ষ দুই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা ও গুগল বছরে দুবার স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই স্বচ্ছতা প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশ-সম্পর্কিত এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মেটা ও গুগলের স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া ও আধেয় সরানোর অনুরোধ বেশি ছিল। পরের ছয় মাসে তা কমে আসে। উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ওই বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়।

বাংলাদেশ সরকারের হয়ে এসব প্ল্যাটফর্মের কাছে অনুরোধ জানিয়ে থাকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বছরের শেষভাগে এসে অনুরোধের পরিমাণ কমে আসা প্রসঙ্গে বিটিআরসির এক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের সময়ে এসে অনুরোধের পরিমাণ তুলনামূলক কমেছে।

মেটা বলছে, সংশ্লিষ্ট আইন এবং নিজেদের পরিষেবা শর্তাবলির আলোকে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের অনুরোধে প্রতিষ্ঠানটি সাড়া দেয়। মেটার দাবি, প্রতিটি অনুরোধ আইনি মানদণ্ড যাচাইয়ে সতর্কতার সঙ্গে তারা সেটি পর্যালোচনা করে থাকে।

গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার মেটার কাছে ৯২৬টি অনুরোধ করে। এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার অনুরোধ ছিল ৮৯৭টি আর জরুরি ভিত্তিতে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ ছিল ২৯টি। সরকার মেটার কাছে ১ হাজার ৪৮৬টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে মেটা তথ্য দিয়েছে।

এর আগের ছয় মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০১টি অনুরোধের মাধ্যমে ২ হাজার ২৮৫টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল সরকার। এ সময় ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দেয় মেটা। সবমিলিয়ে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৭৭১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে মেটার কাছে তথ্য চাওয়া হয়।

গত বছরের শেষ ছয় মাসে মেটা বাংলাদেশে ১ হাজার ২৮০টির মতো আধেয়তে প্রবেশ সীমিত করে দেয়। এর মধ্যে ফেসবুকে মন্তব্য (কমেন্ট) ১ হাজার ১৪০টির বেশি, ১২৩টি পোস্ট, ৮টি প্রোফাইল রয়েছে। আর প্রথম ছয় মাসে মেটা ২ হাজার ৯৪০টির বেশি আধেয়তে প্রবেশ সীমিত করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৬০০টির বেশি ফেসবুক মন্তব্য, পোস্ট ৩১৭টি, পেজ ও গ্রুপ ১টি এবং প্রোফাইল ৫টি।

মেটা বলেছে, ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন বিভিন্ন অপরাধের জন্য স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি যেসব রিপোর্ট করেছে, মেটা সেসব আধেয়তে প্রবেশ সীমিত করেছে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পণ্য, ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আক্রমণ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈরিতা উসকে দেওয়ার মতো বিষয় ছাড়াও স্থানীয় অন্যান্য আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল।

ইউটিউবের আধেয় সরানোর অনুরোধ

বাংলাদেশ সরকার গুগলের কাছে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি অনুরোধ জানায়। এসব অনুরোধে ১ হাজার ৩৫৭টি আধেয় সরাতে বলা হয়। এসব অনুরোধের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে গুগল কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। বাকিগুলো আইনি প্রক্রিয়া, নীতিমালাসহ বিভিন্ন কারণে সরানো হয়।

সরকারের অনুরোধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মানহানি, নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবা এবং সরকারের সমালোচনার বিষয়বস্তু। সরকার সবচেয়ে বেশি ইউটিউবের বিষয়বস্তু সরানোর অনুরোধ জানিয়েছিল।

এর আগে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৩৭টি অনুরোধ করা হয়। ওই সময়ে ৪ হাজার ৪৭০টি আধেয় সরানোর জন্য অনুরোধ করে সরকার। সবমিলিয়ে এক বছরে গুগলের কাছে সরকার ৫ হাজার ৮২৭টি আধেয় সরানোর অনুরোধ করেছিল।

আরও পড়ুনইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ ০১ মে ২০২৫

গুগল তাদের স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়ার অনুরোধের বিষয়ও প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ সময়ে বাংলাদেশ সরকার ২৮টি অনুরোধ জানায়। এর মধ্য ৩০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গুগল ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে।

তথ্য ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে আসছে ডিজিটালি রাইট নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। বছরের শেষার্ধে তথ্য চেয়ে অনুরোধের পরিমাণ কম হওয়া প্রসঙ্গে ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বছরের শেষ ছয় মাসে অনুরোধ কমে আসার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, আগের ছয় মাসে রাজনৈতিক কারণে কনটেন্ট (আধেয়) নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা ছিল।

মিরাজ আহমেদ আরও বলেন, ‘লিগ্যাল রিকোয়েস্ট’কে যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে সরকার উপায় হিসেবে ব্যবহার না করে, এ বিষয়ে এখন রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার সময় এসেছে। না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের আইনি ব্যবস্থার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা থেকেই যাবে।

নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে আধেয় অপসারণে বিচারিক তদারকি এবং নিয়মিত তথ্য প্রকাশের যে সুযোগ রাখা হয়েছে, সেটি কেবল নীতিগত অঙ্গীকারে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব প্রয়োগে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি বলেও মনে করেন ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আরও পড়ুনতথ্য চেয়ে সরকারের অনুরোধের সঙ্গে বাড়ছে মেটার সাড়াও০৫ ডিসেম্বর ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন র ধ জ ন য় ল দ শ সরক র র অন র ধ র বছর র শ ষ ২০২৪ স ল ব যবস থ সরক র র প রক শ ছয় ম স রক র র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন