চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
Published: 12th, June 2025 GMT
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়িতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে শাহনেওয়াজ নামের এক প্রবাসী দর্শনার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (১১ জুন) অনিবার্য কারণবশত কাছারি বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের বিষয়টি কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এর আগে ঈদের পরের দিন (৮ জুন) শাহনেওয়াজ নামের এক প্রবাসী দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে গেলে পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে তাঁর কথা-কাটা কাটি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সেসময় ওই দর্শনার্থীকে অফিসকক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গত (১০ জুন) দুপুরে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে ভাঙচুরর ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঈদের পরদিন (৮ জুন) বিকালে শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী স্ত্রী ও ভাতিজাকে নিয়ে কাছারি বাড়ি ঘুরতে আসেন। কাছারি বাড়িতে প্রবেশ মূল্য নিয়ে টিকেট নেন। মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হলেও তাকে কোনো টোকেন দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের টিকেট দেখতে চান মেইন গেইটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী। টিকেট দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহনেওয়াজের সঙ্গে ওই কর্মচারীর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কাস্টোডিয়ানসহ কাছারি বাড়ির অন্যান্য কর্মচারী মিলে তাকে অফিসের মধ্যে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়।
পরে শাহনেওয়াজের অভিভাবক এবং স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় শাহনেওয়াজ ওই দিন রাতেই শাহজাদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। দুই দিন পরও ওই ঘটনায় পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুরের সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা কাছারি বাড়ির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে জনতা।
ঢাকা/রাসেল/এস