দুর্ঘটনাস্থলে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা, তদন্তে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
Published: 13th, June 2025 GMT
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, দেশটির বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই এ তদন্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, ‘এছাড়া সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এই কমিটির কাজ হবে বিমান পরিবহন খাতের সুরক্ষা আরও কঠোর করা এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার দিকেও নজর দেওয়া।’
শুক্রবার সকালেই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। ভারতের নিজস্ব তদন্ত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পক্ষে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ দল ভারতে রওনা হয়েছে। তারা ভারতের তদন্তকে সহায়তা করার জন্য যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন, তার দেশ থেকেও একটি বিশেষজ্ঞ দল গুজরাট রওনা হয়েছে তদন্তে সহায়তা করার জন্য।
 
 বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী বোয়িংয়ের একটি ড্রিমলাইনার বিমান উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজের পাইলট-ক্রুসহ ২৪১ আরোহী নিহত হন। আর যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় তা স্থানীয় বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের একটি হোস্টেল। ওই সময় হোস্টেলের ক্যান্টিনে অনেকে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে পরিষ্কার, হাসপাতাল এলাকায়ই মারা গেছে অর্ধশতাধিক। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। 
গুজরাটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছিলেন।’
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যাত্রা শুরু করেছিল। আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আবাসিক এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় সৃষ্টি হয় বিশাল আগুনের গোলক। বিমানে ২৩২ যাত্রী ও ১০ ক্রু ছিলেন। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিমানের ২৪১ আরোহী নিহত হলেও বিস্ময়করভাবে বেঁচে গেছেন একজন। জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই যাত্রীকে উদ্ধারের পর হাঁটাচলা করতেও দেখা যায়।
আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জি এস মালিক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় স্থানীয় কয়েক বাসিন্দাও মারা গিয়ে থাকতে পারেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি। বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শোক জানিয়েছেন।
বিধ্বস্ত বিমানে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি ছিলেন বলে স্থানীয় এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে, রুপানি নিহত হয়েছেন। দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানে ১৬৯ ভারতীয় ও ৫৩ ব্রিটিশ ছিলেন। এ ছাড়া সাত পর্তুগিজ ও এক কানাডার নাগরিক ছিলেন। আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বিমানটি আবাসিক এলাকা মেঘানিনগরের কাছে ধরপুরে বিধ্বস্ত হয়। তবে কী কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিমান ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার ২৪ জানায়, তারা বিমানটি থেকে সর্বশেষ সংকেত পেয়েছে ৬২৫ ফুট উঁচুতে থাকা অবস্থায়। এটা উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এ উচ্চতায় পৌঁছায়।
ফ্লাইট এআই-১৭১ বিধ্বস্ত হওয়ার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি বিমানটি উড্ডয়নের পর ওপরের দিকে না গিয়ে ক্রমেই নিচে নামতে থাকে। দূর থেকে অনুমান করা যাচ্ছিল, চালক এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পরই বিমানটি আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে।
এনডিটিভি জানায়, বিমানটি দূরের যাত্রার উদ্দেশে রওনা করায় এতে পরিপূর্ণ জ্বালানি ছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিশাল আগুনের গোলক তৈরি হয়। বিধ্বস্তের পরপরই দুই ডজনের বেশি অ্যাম্বুলেন্স এসে ঘটনাস্থলে হাজির হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ভবনের আশপাশে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
 ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এটি। বিমানের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানতে বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর দিকে তাকিয়ে আছেন তদন্তকারীরা। ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানের পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) বিপদ বার্তা বা ‘মে ডে কল’ পাঠিয়েছিলেন। ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। 
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র তদন ত ব ম ন দ র ঘটন আহম দ ব দ দ র ঘটন য় ব ম নট য ক তর প ইলট তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরের ছয়টি আসনের ৪টিতে বিএনপির প্রার্থী হলেন যারা
গাজীপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-৬ আসনের প্রার্থীদের নাম পরে জানানো হবে।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি ঢাকা-২০ আসনে, অপেক্ষায় ৪ নেতা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি
গাজীপুর-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম. মঞ্জুরুল করিম রনি। গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। গাজীপুর-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান এবং গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া, শরিক দলের জন্য কিছু আসন খালি রাখা হয়েছে।”
এর আগে, দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সেই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে আনুষ্ঠানিক তফসিল।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার খবর পেয়ে গাজীপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তবে গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন তানিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন।
ঢাকা/রফিক/মাসুদ