কয়লার দাম কমাতে আদানির সঙ্গে জুনেই বৈঠক পিডিবির
Published: 13th, June 2025 GMT
উৎপাদনে আসার আগেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। দুই বছরেও সেই বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। আদানি কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিলেও পিডিবি তা কাটছাঁট করে হিসাব করছে। কয়লার দাম কমানো নিয়ে ২৩ জুন বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আদানি ও পিডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত। ওই কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় পিডিবি। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। এক বছরের জন্য পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহ করে তারা।
পিডিবি সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে আবার কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। এতে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়তি দাম আসছে। পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিতে উল্লেখ করা সূত্রের সুযোগ নিয়ে এভাবে বাড়তি দাম চাইছে আদানি। যদিও বিল পরিশোধের সময় কয়লার বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না পিডিবি। এতে বকেয়া বিলের হিসাবে পার্থক্য বাড়ছে।
কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। পিডিবি বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না। এতে বকেয়া বিলের হিসাবে পার্থক্য বাড়ছে।গত সরকারের সময় আদানির বিল বকেয়া বাড়ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিল পরিশোধে চাপ দিতে থাকে তারা। ইতিমধ্যে পুরোনো বকেয়া বিলের বড় একটি অংশ শোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এখন নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। পিডিবির হিসাবে গত মে পর্যন্ত আদানির পাওনা বিল ৪৮ কোটি ডলার। আর আদানির হিসাবে এটি ৭০ কোটি ডলারের বেশি। আদানি সূত্র বলছে, চুক্তি অনুসারে গত বছরের জুলাই থেকে কয়লার ‘প্রাইস ইনডেক্স’ বা মূল্যসূচক অনুসারে বিল জমা দিচ্ছে আদানি।
গত ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি ও আদানির প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক অনলাইন বৈঠকে কয়লার দামের প্রসঙ্গ তোলে পিডিবি। কয়লার দামে আমদানি পর্যায়ে ছাড়ের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানিকে আগের মতো ন্যায্য দামে কয়লা সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা এ নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি। লিখিত প্রস্তাবের পর আলোচনার কথা জানিয়েছে। এরপর বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো লিখিত জানানো হয় আদানিকে। এর ভিত্তিতে এবারের বৈঠকে কয়লার দাম কমানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে আইনি পরামর্শকেরাও অংশ নিতে পারেন। এর আগে গত ২২ মে ঢাকায় এসে বিদ্যুৎ–সচিব ও পিডিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন আদানি বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেরসিং বি খিয়ালিয়া। এবারের বৈঠকটি অনলাইনে না কি সরাসরি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো.
বিশ্বজুড়ে কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স (সূচক) বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ দেশ দুটি বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক। তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘোষিত দামের আড়ালে বিশেষ ছাড় থাকে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনে বিশেষ ছাড়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা কেনার প্রকৃত বিল ধরেই খরচ হিসাব করা হয়। তবে আদানির সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সূচকের মধ্যে গড় করে মূল্য হিসাব করা হবে। গড় দাম ধরার কারণে আদানির বিলে বাড়তি দাম আসছে। আদানি বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও সেই সুবিধা পায় না পিডিবি।
আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানির সঙ্গে করা পিডিবির চুক্তিটি ‘অসম’ চুক্তি। চুক্তিতে উল্লেখ করা কয়লার দামের সূত্র দেখে মনে হয়েছে, শুধু বিদ্যুৎ বিক্রি নয়, মূলত কয়লা বিক্রি করেও ব্যবসা করতে চেয়েছে আদানি।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করে পিডিবি। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কয়ল র দ ম ন র দ ম কম বছর র জ র কয়ল উৎপ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’