উৎপাদনে আসার আগেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। দুই বছরেও সেই বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। আদানি কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিলেও পিডিবি তা কাটছাঁট করে হিসাব করছে। কয়লার দাম কমানো নিয়ে ২৩ জুন বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আদানি ও পিডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত। ওই কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় পিডিবি। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। এক বছরের জন্য পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহ করে তারা।

পিডিবি সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে আবার কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। এতে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়তি দাম আসছে। পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিতে উল্লেখ করা সূত্রের সুযোগ নিয়ে এভাবে বাড়তি দাম চাইছে আদানি। যদিও বিল পরিশোধের সময় কয়লার বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না পিডিবি। এতে বকেয়া বিলের হিসাবে পার্থক্য বাড়ছে।

কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। পিডিবি বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না। এতে বকেয়া বিলের হিসাবে পার্থক্য বাড়ছে।

গত সরকারের সময় আদানির বিল বকেয়া বাড়ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিল পরিশোধে চাপ দিতে থাকে তারা। ইতিমধ্যে পুরোনো বকেয়া বিলের বড় একটি অংশ শোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এখন নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। পিডিবির হিসাবে গত মে পর্যন্ত আদানির পাওনা বিল ৪৮ কোটি ডলার। আর আদানির হিসাবে এটি ৭০ কোটি ডলারের বেশি। আদানি সূত্র বলছে, চুক্তি অনুসারে গত বছরের জুলাই থেকে কয়লার ‘প্রাইস ইনডেক্স’ বা মূল্যসূচক অনুসারে বিল জমা দিচ্ছে আদানি।

গত ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি ও আদানির প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক অনলাইন বৈঠকে কয়লার দামের প্রসঙ্গ তোলে পিডিবি। কয়লার দামে আমদানি পর্যায়ে ছাড়ের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানিকে আগের মতো ন্যায্য দামে কয়লা সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা এ নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি। লিখিত প্রস্তাবের পর আলোচনার কথা জানিয়েছে। এরপর বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো লিখিত জানানো হয় আদানিকে। এর ভিত্তিতে এবারের বৈঠকে কয়লার দাম কমানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে আইনি পরামর্শকেরাও অংশ নিতে পারেন। এর আগে গত ২২ মে ঢাকায় এসে বিদ্যুৎ–সচিব ও পিডিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন আদানি বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেরসিং বি খিয়ালিয়া। এবারের বৈঠকটি অনলাইনে না কি সরাসরি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো.

রেজাউল করিম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, কয়লার দামের বিষয়টি চুক্তির মধ্যে উল্লেখ করা আছে। এখানে আইনি মতামতের বিষয়ও জড়িত। তবে আলোচনার মাধ্যমেই একটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়লার দামসহ আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামগ্রিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স (সূচক) বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ দেশ দুটি বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক। তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘোষিত দামের আড়ালে বিশেষ ছাড় থাকে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনে বিশেষ ছাড়ে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা কেনার প্রকৃত বিল ধরেই খরচ হিসাব করা হয়। তবে আদানির সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সূচকের মধ্যে গড় করে মূল্য হিসাব করা হবে। গড় দাম ধরার কারণে আদানির বিলে বাড়তি দাম আসছে। আদানি বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও সেই সুবিধা পায় না পিডিবি।

আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানির সঙ্গে করা পিডিবির চুক্তিটি ‘অসম’ চুক্তি। চুক্তিতে উল্লেখ করা কয়লার দামের সূত্র দেখে মনে হয়েছে, শুধু বিদ্যুৎ বিক্রি নয়, মূলত কয়লা বিক্রি করেও ব্যবসা করতে চেয়েছে আদানি।

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করে পিডিবি। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কয়ল র দ ম ন র দ ম কম বছর র জ র কয়ল উৎপ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ