আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাকবক্স’ উদ্ধার
Published: 13th, June 2025 GMT
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স পাওয়া গেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পাঁচ মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়।
ব্ল্যাকবক্স নামক শক্তপোক্ত যন্ত্রটি উড়োজাহাজের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য রেকর্ড করে রাখে। যন্ত্রটি পাওয়া গেছে চিকিৎসকদের হোস্টলের ছাদে। এ ভবনে উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়েছিল।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর (এএআইবি) একটি বড় দল এবং গুজরাট সরকারের ৪০ জন কর্মী ব্ল্যাকবক্স বা ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) উদ্ধার করেন।
ব্ল্যাকবক্সটি দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ দুর্ঘটনা ভারতের অন্যতম প্রাণঘাতী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিমানের গতি, উচ্চতা, ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স, ককপিটের অডিওসহ পাইলটদের এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্ল্যাকবক্সে সংরক্ষিত থাকে। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায়ও এর তথ্য-উপাত্ত নষ্ট না হয়।
যন্ত্রটি সাধারণত স্টিল ও টাইটেনিয়ামের মতো টেকসই ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে দুটি প্রধান অংশ থাকে—ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)। ডিএফডিআর ফ্লাইট–সংক্রান্ত কারিগরি তথ্য সংরক্ষণ করে। অন্যদিকে সিভিআর ককপিটের শব্দ, পাইলটদের কথাবার্তা এবং রেডিওর মাধ্যমে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য সংরক্ষণ করে।
টাটার মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার এই উড়োজাহাজে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন যাত্রী বেঁচে আছেন। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক বিষ্ণু কুমার রমেশ।
টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
চন্দ্রশেখর বলেন, ‘প্রশিক্ষিত তদন্তকারীরা আমাদের বোঝাতে সাহায্য করবেন, কীভাবে একটি সাধারণ ফ্লাইট এমন বিপর্যয়ে পরিণত হলো।’
এই নির্দিষ্ট বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ১২ বছর আগে তৈরি হয়েছিল।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের একটি সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানটি রানওয়েতে গতি নিয়ে উড়াল দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে সবকিছু স্বাভাবিক লাগছিল, কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। কয়েক সেকেন্ড পর উড়োজাহাজটি উড়ে যায়। তখনো কোনো অশুভ ইঙ্গিত ছিল না।
এরপরই দেখা যায়, উড়োজাহাজের উচ্চতা বাড়ছে না, যেটা এ ধরনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের জন্য স্বাভাবিক নয়। কয়েক সেকেন্ড সমান্তরালভাবে ওড়ার পর এটি দ্রুত নিচে নামতে শুরু করে। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই ফ্লাইট আর গন্তব্যে পৌঁছাবে না।
এরপরই উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে কিছুটা দূরে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর সজোরে ধাক্কা দিয়ে আছড়ে পড়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহম দ ব দ দ র ঘটন র কর ড ফ ল ইট
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]