কখনও হর্ন বাজিয়ে, আবার কখনও শোঁ শোঁ শব্দ তুলে ছুটে চলছে যানবাহন। সেদিকে তাকানোর সময় নেই কারও। কেউ চামড়া পরিষ্কার করছেন, কেউবা লবণ মাখাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লবণজাত করা চামড়া স্তূপ করছেন। যত সময় বাড়ছে, ততই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। সঙ্গে বাড়ছে হাটের কর্মচাঞ্চল্য। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটের দৃশ্য এটি। 
যশোর শহর থেকে পূর্ব দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে ছয় কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে হাটটির। একেবারেই মহাসড়কঘেঁষে গড়ে ওঠা হাট বসে শনি ও মঙ্গলবার। তবে কোরবানির মৌসুমে সাপ্তাহিক এ দুই হাটবার পায় নতুন চেহারা।
১৯৭০-এর দশকে সেই যে হাটটির সূচনা সময় থেকে এখানে চামড়া বিক্রি শুরু হয়েছিল, সেই ধারা এখনও টিকে আছে। মহাসড়কের পাশেই গড়ে ওঠা এই হাটটির যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। শুধু খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতেই নয়, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও পরিচিত হাট এটি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পিকআপ ভ্যান, ছোট ট্রাক ও ভ্যানে চামড়াবোঝাই করে লোকজন হাটে আসছেন। দরদাম করছেন স্থানীয় আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলাতে অন্য মোকামেও যেতে দেখা যায় হাটটিতে চামড়া আনা ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কাঙ্ক্ষিত দাম মিললেই স্থানীয় আড়তদারদের কর্মচারীরা ভ্যান বা ট্রাক থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন চামড়া। 
স্থানীয়রা জানান, হাটবারে চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে দ্বিগুণ। চামড়া ওঠে আশানুরূপ। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাট জমে ওঠে। বেচাবিক্রি চলে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। দূরদূরান্তের অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় হাটবারের আগের দিন রাতে উপস্থিত হন। হাটের ফাঁকা জায়গায় গাড়িগুলো রেখে রাত্রিযাপন করেন পাশের মুড়লি বা মনিহার এলাকার হোটেলে। কেউ কেউ আবার চামড়া আনা গাড়িতেই রাত পার করেন। এর পর কাকডাকা ভোর থেকেই নিজ নিজ চামড়া গাড়ি থেকে নামিয়ে স্তূপ করেন হাটের ফাঁকা জায়গায়। অনেক সময় হাটের জায়গা ছাপিয়ে ব্যবসায়ীরা যশোর-খুলনা মহাসড়কের ফুটপাতেও বেচাকেনা করেন। হাটটিতে শুরু থেকেই ব্যবসা করে আসছেন হাজি আব্দুল মালেক। বাজারে যে কয়েকজন আড়তদার রয়েছেন, তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ তিনি। সবাই হাজি সাহেব বলেই ডাকেন। হাটটির গোড়াপত্তন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে চামড়ার হাট ছিল মনিরামপুর ও খুলনার পাটকেলঘাটাতে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সবাই মনিরামপুরে ব্যবসা করত। স্বাধীনতার পরের বছরই মনিরামপুরে চামড়ার হাটে খাজনা বাড়ানো হয়। তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে যশোর সদরের রামনগরের মনোয়ার, ঝিনাইদহের কওসার মিয়া, বাশার মিয়াসহ কয়েকজন প্রথমে যশোর-খুলনা, যশোর-চুকনগর সড়কের রাজারহাট মোড়ে চামড়ার হাট বসান। যেহেতু পাশেই ভৈরব নদ এবং সড়কপথে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো, তাই খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া এবং বরিশাল বিভাগের ব্যবসায়ীরা এই হাটে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন। মোড়টিতে জায়গা সংকটে ১৯৭৫ সালের দিকে রাজারহাটের বর্তমান স্থানে হাটটি স্থানান্তর করা হয়। তখন হাটটিতে স্থানীয় দেড় হাজার ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচা করতেন। প্রথম হাটটি ১৫ হাজার টাকায় ইজারা দেন যশোরের স্বনামধন্য অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন।
রাজারহাটের আড়তদার হাসিব চৌধুরী বলেন, তিনি দেড় দশক ধরে চামড়ার ব্যবসা করেন। এখানকার চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন স্থানের আড়তদার ও ট্যানারির মালিকের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা বকেয়া টাকা সময়মতো দেন না। নানা অজুহাতে দিনের পর দিন টাকা ফেলে রাখেন। একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাদার আমল থেকে বাজারে চামড়ার ব্যবসা দেখে আসছি। বাইরের ব্যবসায়ী আসা কমলেও স্থানীয় আড়তদার বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটবার ছিল গত মঙ্গলবার। ওই দিন হাটে তেমন চামড়ার সরবরাহ হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামেও চামড়ার বেচাবিক্রি হয়নি। তবে শনিবারের হাটে কেনাবেচা জমজমাট হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র র ব যবস য় ব যবস য় র র জ রহ ট আড়তদ র

এছাড়াও পড়ুন:

৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সরগরম বাগেরহাটের মৎস্য আড়ত

ভোরের আলো ফোটার আগেই বাগেরহাটের কেবি বাজারে হইচই। সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মাছ ধরে ফিরেছেন জেলেরা। আজ শুক্রবার ভোরে দুটি ট্রলার একসঙ্গে মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়তেই সরব হয়ে ওঠে এলাকার প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি।

নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দিনেই বাজারে ভিড় করেন শত শত মৎস্য ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও আড়তদার। শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। মাছের সরবরাহ কম হলেও চাহিদা ছিল অনেক বেশি।

কেবি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি শহরের দড়াটানা নদীর তীরের বাসাবাটি এলাকায়। জেলেরা সাগর থেকে ধরা মাছ নিয়ে সরাসরি ঘাটে আসেন। এখান থেকেই বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান।

ভোরে বাজারে দেখা যায়, ঘাটে ভিড়েছে দুটি ট্রলার। সেখান থেকে শ্রমিকেরা ঝুড়িতে করে মাছ তুলছেন। ইলিশ, রুপচাঁদা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, ঢেলা, চ্যালাসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ উঠেছে বাজারে। তবে বাজারে যে পরিমাণ মাছ এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে দাম ছিল চড়া।

সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা জেলে রুহুল আমিন বলেন, ‘সাগরে যাওয়ার পরে কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছি। অল্প কিছু ইলিশ পেয়েছি, বাকি সব আজেবাজে মাছ। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ার কারণে চলে এসেছি।’

মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, ‘অনেক দিন পর এলাম। দাম বেশি, তবু কিছু মাছ কিনছি। এখন এলাকায় বিক্রি করতে পারলে ভালো হয়।’

আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন১১ জুন ২০২৫

বাজারে ইলিশের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রুপচাঁদা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কঙ্কণ, তুলারডাটি, ঢেলা, চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবাসহ নানা মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধীরে ধীরে ট্রলারের সংখ্যা ও মাছের পরিমাণ বাড়লে দামও স্বাভাবিক হবে।

কেবি বাজারে মাছ বিক্রি হয় সাধারণত ‘পণ’ হিসেবে। এক পোণে ৮০টি মাছ থাকে। আকার অনুযায়ী প্রতি পোণের দাম নির্ধারিত হয়। ক্রেতারা ঢাকের শব্দে বিট দিয়ে মাছ কেনেন।

কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, অবরোধের পর আজই প্রথম বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলার এসেছে। তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছেন। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে মাছ বেশি হলে দাম কিছুটা কমে আসবে।

উল্লেখ্য, মাছের প্রজনন ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগরে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ সময় সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল। এর আগে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৬৫ দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি
  • ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সরগরম বাগেরহাটের মৎস্য আড়ত
  • সুশাসনের আকাঙ্ক্ষা কতখানি প্রতিফলিত হলো?
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাজারে অস্থিরতা চলছেই
  • রাজশাহী অঞ্চলে কেজি দরে কেউ আম কিনছেন না, চলছে পুরোনো নিয়মে
  • কৃষক ঠকানোর ফাঁদ
  • কোরবানি কমেছে, লবণ মেশানো চামড়ায় ভালো দামের প্রত্যাশা
  • আমের কেজিতে দেড় টাকা কমিশন, কাটল অচলাবস্থা
  • আমে ঢলন নয়, এবার কমিশন