ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 14th, June 2025 GMT
চার দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশের উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার এবার যুক্তরাজ্য সফরে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে গেছে। এর একটা অংশ যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছে। তাই এবার যুক্তরাজ্য সফরে বড় ফোকাস দেওয়া হচ্ছে সম্পদ পুনরুদ্ধারে। তিনি উল্লেখ করেন, এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদ জব্দ করার ঘটনা উল্লেখ করেন। এছাড়া শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ড.
এদিকে, অধ্যাপক ইউনূস গতকাল ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
সফরে প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া এই চার দিনের সরকারি সফরে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের স্পিকার ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে গত ৯ জুন সন্ধ্যায় চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরদিন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য ইউন স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।