দীর্ঘ ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ১১ জুন থেকে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে বঙ্গোপসাগরে। সেই সঙ্গে সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাট শহরের কেবি বাজার। তবে শুরুর দিকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদীর তীরে শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন কেবি বাজারে নিষেধাজ্ঞা পরবর্তি প্রথম মাছের চালান নিয়ে আসেন জেলেরা। সকাল থেকেই জমে ওঠে মাছের হাট। ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে জেলেরা ভিড় করছেন বাজার ঘাটে, চলছে পাইকারদের ডাকাডাকি, দরদাম আর বেচাকেনা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরই মাছ ধরা শুরু হয়েছে। মাছ ধরে আজ প্রথমদিনের মতো সাগর থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় বেচাকেনা। কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় প্রতিদিন এই বাজারে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইলিশ মাছ। ইলিশ ছাড়াও বাজারে উঠেছে কাউয়া, চেলা, ঢেলা চেলা, লইট্টা, ভোল, কঙ্কন, কইয়া ভোল, জাবা ভোল, মোচন ঘাগড়া, মেইদ, টেংড়া, রূপচাঁদা, বোতলমাছসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।
শুক্রবার বাজারে ইলিশের দর ছিল, ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ৬০০-৮০০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকা। ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ২০০০-২৫০০ টাকা।
এছাড়া রূপচাঁদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায়, আর কঙ্কন, তুলারডাঁটি, ঢেলাচ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুড়ি, জাবা, বিড়ালজাবা প্রজাতির মাছ ১০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি হিমায়িত মাছও পাওয়া যাচ্ছে এই বাজারে।
মাছ কিনতে আসা ক্রেতা কবির হোসেন বলেন, ‘‘সমুদ্রের মাছ খেতে খুব ভালো লাগে। কোল্ড স্টোরেজের মাছ পছন্দ করি না, তাই আজকে তাজা মাছ কিনতে এসেছি।’’
মাছ বিক্রেতা মাসুম শেখ বলেন, ‘‘সমুদ্রের মাছ ছাড়া বাজার জমে না। এতদিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল, তাই বিক্রি করতে পারিনি। এখন ভালো মাছ এসেছে, ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের সরবরাহ কম।’’
জেলে এবাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাগরে গিয়ে খুব একটা মাছ পাইনি। যা পেয়েছি, তাতে হয়তো খরচই উঠবে না।’’
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘অবরোধ শেষে আজ প্রথম ট্রলার এসেছে, মাছের পরিমাণ কম হলেও পাইকারদের উপস্থিতি বেশি। তাই দাম কিছুটা চড়া। তবে সামনে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।’’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড.
প্রসঙ্গত, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও মজুত বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর ২০ এপ্রিল থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এবার জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সময় এগিয়ে এনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এই সময়ে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং গভীর সমুদ্রে ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল।
ঢাকা/শহিদুল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সরগরম বাগেরহাটের মৎস্য আড়ত
ভোরের আলো ফোটার আগেই বাগেরহাটের কেবি বাজারে হইচই। সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মাছ ধরে ফিরেছেন জেলেরা। আজ শুক্রবার ভোরে দুটি ট্রলার একসঙ্গে মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়তেই সরব হয়ে ওঠে এলাকার প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি।
নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দিনেই বাজারে ভিড় করেন শত শত মৎস্য ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও আড়তদার। শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। মাছের সরবরাহ কম হলেও চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
কেবি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি শহরের দড়াটানা নদীর তীরের বাসাবাটি এলাকায়। জেলেরা সাগর থেকে ধরা মাছ নিয়ে সরাসরি ঘাটে আসেন। এখান থেকেই বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান।
ভোরে বাজারে দেখা যায়, ঘাটে ভিড়েছে দুটি ট্রলার। সেখান থেকে শ্রমিকেরা ঝুড়িতে করে মাছ তুলছেন। ইলিশ, রুপচাঁদা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, ঢেলা, চ্যালাসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ উঠেছে বাজারে। তবে বাজারে যে পরিমাণ মাছ এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে দাম ছিল চড়া।
সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা জেলে রুহুল আমিন বলেন, ‘সাগরে যাওয়ার পরে কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছি। অল্প কিছু ইলিশ পেয়েছি, বাকি সব আজেবাজে মাছ। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ার কারণে চলে এসেছি।’
মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, ‘অনেক দিন পর এলাম। দাম বেশি, তবু কিছু মাছ কিনছি। এখন এলাকায় বিক্রি করতে পারলে ভালো হয়।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন১১ জুন ২০২৫বাজারে ইলিশের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রুপচাঁদা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কঙ্কণ, তুলারডাটি, ঢেলা, চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবাসহ নানা মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধীরে ধীরে ট্রলারের সংখ্যা ও মাছের পরিমাণ বাড়লে দামও স্বাভাবিক হবে।
কেবি বাজারে মাছ বিক্রি হয় সাধারণত ‘পণ’ হিসেবে। এক পোণে ৮০টি মাছ থাকে। আকার অনুযায়ী প্রতি পোণের দাম নির্ধারিত হয়। ক্রেতারা ঢাকের শব্দে বিট দিয়ে মাছ কেনেন।
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, অবরোধের পর আজই প্রথম বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলার এসেছে। তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছেন। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে মাছ বেশি হলে দাম কিছুটা কমে আসবে।
উল্লেখ্য, মাছের প্রজনন ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগরে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ সময় সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল। এর আগে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৬৫ দিন।