ইসরায়েল–ইরান সংঘাতের জের, বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার দাম
Published: 14th, June 2025 GMT
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সঙ্গে সোনার দামও বেড়েছে। গতকালের ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সকালেও সোনার মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে।
আজ শনিবার সকালেই বিশ্ববাজারে আউন্সপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক শূন্য ২ ডলার বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ফলে সোনার দাম উঠেছে ৩ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৪৭ ডলার। একই সঙ্গে বেড়েছে রুপার দাম। আজ সকালে রুপার দাম আউন্সপ্রতি শূন্য দশমিক শূন্য ৯ ডলার বা শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। খবর গোল্ড প্রাইস ডট অর্গ
গত দুদিনে সোনার এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে আজ স্পট মার্কেটে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪৩৩ ডলারে উঠেছে। সেই সঙ্গে গোল্ড ফিউচার্সের দাম বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৫২ দশমিক ৮০ ডলার। স্পট মার্কেটে রুপার দাম বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩২ ডলার আর ফিউচার্সের দাম হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৫ ডলার।
শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম হঠাৎ বেড়ে যায়; কারণ, ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সোনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। স্পট মার্কেটে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪১৭ দশমিক ১০ ডলার। ফলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সোনার দাম যে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে উঠে রেকর্ড স্পর্শ করেছিল; সোনার দাম এখন আবার তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
সোনার দামের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, গোল্ড ফিউচার্সের দাম ৩ হাজার ৪৪৪ ডলারের কাছাকাছি এসে থেমে যাবে। অর্থাৎ যদি সপ্তাহান্তে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কিছুটা কমে, স্বল্পমেয়াদে সোনার দাম কমার সম্ভাবনা আছে।
সোনা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে যখন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্র আকার নিচ্ছে আর সেই প্রেক্ষাপটে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অর্থের নিরাপত্তার জন্য সোনায় ঝুঁকছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সোনার চাহিদা বাড়বে আর এতে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি হলো, সোনা থেকে সুদ পাওয়া যায় না ঠিক, সুদের হার কমার আশঙ্কা থাকলে এর আকর্ষণ বেড়ে যায়। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের আভাসও সোনার দামে ঊর্ধ্বমুখী চাপ তৈরি করেছে। ফলে অনেকেই এখনই বিনিয়োগ নিশ্চিত করে নিচ্ছেন; কারণ, বাজার পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় অনিশ্চয়তার কারণে গত সপ্তাহের শুরু থেকেই সোনার দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এই অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। যদিও দুই দেশের আলোচনায় কিছু অগ্রগতির আভাস মিলেছে, বাণিজ্যচুক্তির সুস্পষ্ট শর্ত না থাকায় বাজারে আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে।
এর মধ্যেই মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সম্ভাবনা কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনায় পুনরায় সক্রিয় অবস্থানের কারণে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলেই এই পূর্বাভাস।
বাজারে অস্থিরতা থাকবেইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম অস্থির থাকতে পারে বলে আশঙ্কা। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে স্পট মার্কেটে সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, বিশেষত যদি ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে এর চাহিদা বাড়তেই থাকে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেড) সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, মূল্যস্ফীতির গতি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপ্রবাহ—এই তিনটি বড় অর্থনৈতিক বিষয় স্বল্প মেয়াদে সোনা ও অন্যান্য পণ্যমূল্যের দর নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই প্রেক্ষাপটে সোনা বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব জ র ইসর য় ল ন র পদ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।